ফেসবুকে ছবি শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম এখন মূলত সেলিব্রেটিদের প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অথবা সেলিব্রেটি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখানে যোগ দেন অনেকে। অ্যাপটিতে ইদানীং ‘শরীর প্রদর্শন’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে আকর্ষণের মূলে নারী বা পুরুষের মেদহীন শরীর। সেই সঙ্গে ফিটনেস বিষয়ক নানা টিপস লুফে নিচ্ছে তরুণরা।
ফিটনেস সম্পর্কিত কনটেন্টে জনপ্রিয়তার বুঝা যায় #ফিটসপাইরেশন (#fitspiration) হ্যাশট্যাগটির ব্যবহার দেখলেই। ইনস্টাগ্রামে এটি এ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ বার। আর ফিটনেস নিয়ে যারা উৎসাহ দেন, নানা টিপস দেন এমন সেলিব্রেটির প্রত্যেকের গড় ফলোয়ার ১ কোটি ৩০ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে এই শরীর প্রদর্শণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। ইাতবাচক দিক হলো সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে। তবে এতে শরীরচর্চা অনেকের বাতিকে পরিণত হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে ঝড় তোলা মেদহীন পেশীবহুল দেহ অথবা বিশেষ করে মেয়েদের স্লিম ফিগারের একটা ছবির জন্য কম কাঠ খড় পোড়াতে হয় না! এর ফলাফল শেষ পর্যন্ত ‘অরথোরেক্সিয়া নার্ভোসা’ নামক শারীরিক ও মানসিক বিকারে পর্যবসিত হয়।
‘অরথোরেক্সিয়া নার্ভোসা’ হলো আহারে অনীহা। খুব বেছে বেছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, তাও অনেক কম পরিমাণে এবং অতিরিক্ত শরীরচর্চা করাই এই সমস্যার লক্ষণ। একে হালকাভাবে নেয়ার উপায় নেই। কেননা অরথোরেক্সিয়া শরীরের জন্য একটি ক্ষতিকর অবস্থা। অপুষ্টির প্রভাবে ভবিষ্যতে নানা শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয় অরথোরেক্সিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানসিক স্বাস্থ্যও। এ ধরনের সমস্যাক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যে কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায়। তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে। আর একবার ক্ষুধামান্দ্য সমস্যা দেখা দিলে এটি নিরাময় করা বেশ কঠিন।
লন্ডনের গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের ( ইউসিএল) বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সালে এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। তারা দেখান, ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয়তার নেশাই অরথোরেক্সিয়া বিস্তারের অন্যতম কারণ। এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় তাদের ওপরই যারা ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবারের ছবি প্রকাশ করে থাকেন। গবেষণায় দেখা যায়, এদের অনুসরীদের ওপর আহার অনীহা জেঁকে বসে। ফলোয়াররা পরামর্শ অনুয়ায়ী খাওয়া কমিয়ে দেয়। কেবল ‘পুষ্টিকর’ খাবার খায় যেমন শাক সবজি, সালাদ, ডেটক্স ইত্যাদি। এতে যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে তা তাদের বুঝতে অনেক দেরি যায়।
কানাডীয় ইনস্টাগ্রাম তারকা জেন ব্রেট এমন অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন । সম্প্রতি তিনি তার আহার অনীহা থেকে মুক্তির আদ্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তারও অনুসারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫০ হাজার । তিনি স্থানীয় ‘আইজি ফিটনেস কমিউনিটি’ তে যোগ দেয়ার পর দেখেন, সেখানেও অনেকেই তার মতো সমস্যায় ভুগছেন। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘ফিটনেস মানে সারাদিন শরীরচর্চা আর লেটুস পাতা খাওয়া নয়!’
দেখা যায়, ইনস্টাগ্রামে অনেকে ফিটনেসের উন্নতির ক্রম অনুযায়ী ছবি পোস্ট করেন। যেমন, এক সপ্তাহে ১০ কেজি ওজন কমানোর পূর্বে ও পরের ছবি। এর জন্য তারা কী কী করেছেন সেসবও উল্লেখ। এ ধরনের ছবি ও বর্ণনা ফলোয়ারদের খুব সহজে প্রভাবিত ও উৎসাহিত করে। এগুলোকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ভেবে ভুল করেন তারা। আর নিজের অজান্তেই এক সময় অরথোরেক্সিয়া নার্ভোসায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পুষ্টি বিশানদরা বলেন, শরীর সুস্থ রাখতে পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। সূত্র: বিবিসি