ডেঙ্গু রোগে প্লাটিলেট কাউন্ট ও ব্লাড ট্রান্সফিউশন নিয়ে রোগীরা আতঙ্ক ও বিভ্রান্তিতে ভোগেন বেশি। দেখা যায়, প্লাটিলেট কাউন্ট ৫০ হাজারের নিচে নামলেই রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং ঘন প্লাটিলেট কাউন্ট জানার চেষ্টা করে।
তবে প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া দিয়ে ডেঙ্গুর তীব্রতা মাপা হয় না। প্লাটিলেট ঠিক থাকলে রোগী ভালো থাকবে তাও নয়।
প্লাটিলেট দিলেই যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে এমনও নয়। সুতরাং এই অহেতুক প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন ডেঙ্গুকে বরং জটিল করে তোলে।
প্লাটিলেট দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা দিলে এবং প্লাটিলেট কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে নামলে অথবা রক্তক্ষরণ নেই কিন্তু প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে, তবেই প্লাটিলেট দেওয়ার কথা ভাবা হয়।
প্লাটিলেট কমে যাওয়া (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া) কোনো মেডিক্যাল ইমারজেন্সি নয়। অর্থাৎ প্লাটিলেট কমে যাওয়া মাত্রই রোগী রক্তক্ষরণ হয়ে হঠাৎ মারা যাবে বিষয়টি এ রকম নয়। প্লাটিলেট কমলে শরীরে এক ধরনের মাইনর ক্যাপিলারি ব্লিডিং (ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ বা এই জাতীয়) হয়।
রোগী মারা যায় মূলত ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। অর্থাৎ ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে রক্তনালিগুলো আক্রান্ত হয়। রক্তনালির গায়ে যে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে সেগুলো বড় হয়ে যায়। তা দিয়ে রক্তের জলীয় উপাদান বা রক্তরস বের হয়ে আসে। তখন রক্তচাপ কমতে থাকে, পিসিভি বা প্যাকড সেল ভলিউম বাড়তে থাকে। এটা ঠেকাতে তখন রোগীকে পর্যাপ্ত ফ্লুইড বা তরল দিতে হবে। এই তরল মুখে খাওয়ানো যেতে পারে বা শিরায় দেওয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কত তা ঘন ঘন না দেখে রোগীর রক্তচাপ ঠিক আছে কি না, রোগী পানিশূন্যতায় ভুগছে কি না, রক্তের পিসিভি বা হেমাটোক্রিট কেমন তা দেখা উচিত। যদি এমনটি হয় তাহলে পর্যাপ্ত তরল দিন বা ফ্লুইড কারেকশন করুন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
চিকিৎসকদের উচিত, রোগীর চিকিৎসা ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে হেমাটোক্রিট ভ্যালু ও রক্তচাপকে গুরুত্ব দিয়ে শিরায় নরমাল স্যালাইন দেওয়া। নরমাল স্যালাইনে কাজ না হলে কলয়েড সলিউশন দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর ন্যাশনাল গাইডলাইনটি সবার ফলো করা উচিত।