জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়ংকর খরার মুখে মেক্সিকো

ইহেলথ২৪ ডটকম ডেস্ক: কয়েক শতাব্দের মধ্যে এমন খরার মুখোমুখি হয়নি মেক্সিকো৷ যাকে বলে ভয়াবহ দুর্দিন৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন সেটাই ঘটিয়ে দিতে চলেছে এই দেশটির ভাগ্যে৷ তার জন্য সবরকমের মোকাবিলা প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার৷

 
ব্যাপারটা নিয়ে সর্বাগ্রে যিনি মাথা ঘামিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট৷ ফেলিপে কালদেরন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে যেসব সমস্যা চলছে এবং আসতে চলেছে, সেসব নিয়ে এই মানুষটি যথেষ্ট সচেতন৷ নিজের দেশের সমস্যার মোকাবিলায় তাই তিনিই সর্বাগ্রে তৎপরতা দেখাতে শুরু করেন৷
 
তৎপরতার প্রসঙ্গে আসবো পরে৷ আগে শোনা যাক সমস্যার সালতামামি৷ মেক্সিকোর মোট ছয়টি অত্যন্ত ‘সুখা’ বা খরা কবলিত প্রদেশের বাসিন্দারা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে প্রবল জলকষ্টে ভুগছেন৷ চাষের পানি তো দূরস্থান, পানীয় জলেরও সন্ধান নেই তাদের কাছে৷ পরিস্থিতি এতটাই গভীর যে সরকারের উদ্যোগই একমাত্র ভরসা৷ আর সে উদ্যোগের পন্থা অনুসন্ধান আদৌ সহজ নয়৷
 
এবার আসা যাক কৃষিকাজের ক্ষতির পরিমাপের বিষয়ে৷ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, মেক্সিকোর এই খরার ফলে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের শষ্য নষ্ট হবে৷ ইতিমধ্যেই সেই শষ্য নষ্ট হওয়ার দুঃসংবাদ শোনা যাচ্ছে সেদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷ আর শষ্য যদি কম ফলে, তার প্রভাবে যা হবে, তা হলো খাদ্যাভাব৷ তার কথাও যে শোনা যাচ্ছে না, তা নয়৷ উত্তর মেক্সিকোর আদিবাসী তারাউমারা প্রজাতির কয়েক লক্ষ মানুষ এই খাদ্য সংকটের সবচেয়ে বড় শিকার৷ এ তথ্যও সরকারেরই৷ ইতিমধ্যেই সেখানে পরিস্থিতি সামলাতে কয়েক মিলিয়ন লিটার দুধ আর টন টন খাদ্য পাঠিয়েছে মেক্সিকো সরকার৷ তবে তাতে যে সমস্যার কোন সমাধান হবে না আদৌ, সেকথাও জানিয়েছে সরকারি বিবৃতি৷
 
এখানেই শেষ নয়৷ পরিবেশ আর আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত এই বিপুল খরা আর কী সমস্যা আনতে চলেছে মেক্সিকোর জন্য? প্রশাসনিক কিছু পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এই খরা আর যে সমস্যাটিকে বড় করে তুলতে চলেছে তাহল গবাদি পশুর সংখ্যা দ্রুতহারে কমে যাওয়া৷ আসলে মেক্সিকোর গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরুর বিশাল চাহিদা রয়েছে অ্যামেরিকার বাজারে৷ মাংসের জন্য অ্যামেরিকা মেক্সিকোর গরুগুলিকে কিনে নিতে নিতে এখন যে পরিস্থিতিতে মেক্সিকো পৌঁছেছে, তাতে তাদের নিজেদের জন্য প্রায় কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না৷ গত মাস থেকে মেক্সিকোর গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরুর দাম বেশ ভালোই চড়ে গেছে৷ কারণ, পশুর অপ্রতুলতা৷ এখন যা পরিস্থিতি, তাতে খরার কারণে অনেক পশুই দ্রুত রোগের শিকার হচ্ছে৷ ফলে অদূর ভবিষ্যতে যে পরিস্থিতি আসতে চলেছে, তাতে মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া এলাকায়, যেখানে এই ধরণের পশু খামারগুলি সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে, তাদের মালিকদের প্রায় মাথায় হাত৷
 
যেমন চিয়াহুয়া এলাকার ডেল রিও-র নামজাদা একটি খামারের মালিক ড্যারেল হারগ্রোভ৷ সংবাদসংস্থা রয়টার্স-কে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘১৯৫০ সালের পর থেকে এতবড় পশুখামারের দুর্যোগ এদেশে আসেনি৷ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, খরার কারণে এবং যথেষ্ট পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে আমাদের গরুগুলো অধিকাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে৷ এই অপুষ্ট গরুগুলি প্রজননের জন্যও ভালো নয়৷ কারণ এদের থেকে যেসব পরবর্তী প্রজন্মের গরু জন্মাবে, তাদের স্বাস্থ্য ভালো হবে না৷ ফলে আগামী বেশ অনেক বছর ধরে এই সমস্যা থেকেই যাবে৷”
 
সমস্যার সাতকাহন এখানেই শেষ হয়নি মেক্সিকোর জন্য৷ খরা মানেই পানির স্বল্পতা৷ তার ওপরে মেক্সিকোর পয়োপ্রণালী এবং পানি সরবরাহের যে মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থা রয়েছে, তার দীর্ঘকাল কোনোরকমের সংস্কার করা হয়নি৷ যার ফলে মাটির তলায় বা ওপরে বহু জায়গায় পাইপ ফেটে রয়েছে৷ যাতে বিপুল পরিমাণের পানির অপচয় লেগেই রয়েছে প্রতি বছর৷ সেই ব্যবস্থাকে ঠিক করতে এবার উঠেপড়ে লেগেছে মেক্সিকোর সরকার৷ প্রেসিডেন্ট কলদেরন মেক্সিকোর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন এ বিষয়ে৷ খরার সম্ভবনা জানার পর থেকেই কিছু বিশেষ গবেষণা চালায় সরকার৷ তার থেকে জানা যায়, আগামী দুই দশকে মেক্সিকোকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তাদের পানি পরিবহণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করতেই হবে৷ অন্য উপায় নেই৷
 
সেই মোতাবেক, মেক্সিকোর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা কনাগুয়াকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷ এই খাতে ৩০০ বিলিয়ন পেসো (মেক্সিকান মুদ্রা ) বা ২৩.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মঞ্জুর করেছে সংসদ৷ সেই অর্থে পানি পরিবহণ ব্যবস্থাকে পুরোদস্তুর আধুনিকীকরণ করা হবে মেরামত করা হবে ফুটো হয়ে যাওয়া পাইপগুলি৷ গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত জলকে যাতে পুনর্ব্যবহার করা যায়, তার বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করাও হবে৷
 
এ সবই হবে এবং তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তনের কুপ্রভাবে মেক্সিকোর সমস্যার সমাধান আগামী দুই দশক ধরে খুঁজতে হবে, বলছেন পরিবেশবিদরা৷ সেই সমস্যার হাল এত সহজে মিলবে না৷ সূত্র: ইন্টারনেট
Exit mobile version