পানিনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান

নিজস্ব প্রতিবেদক: পানি সম্পদ খাতে সুশাসনের ঘাটতি ও অবৈধ দখলসহ দুর্নীতির কারণে দেশে সুপেয় পানির উৎস সংকুচিত ও দূষিত হওয়ায় উদ্বোগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সরকারের পানিনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

 

 

২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাতটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে।

 

 

‘জীবন ও জীবিকার জন্য পানি: পশুর নদীসহ সকল পানিসম্পদ রক্ষায় চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), সেভ দ্য সুন্দরবন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশীপ, এনজিও ফোরাম ও সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস মুভমেন্ট।

 

 

 

মানবন্ধনে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “বাংলাদেশে পানির স্তর যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে পানি সংগ্রহ করা যাবে কি না সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহে রয়েছেন।”

 

 

তিনি আরো বলেন, “ভারত পানির অধিকার থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে। সরকার পানির ন্যায্যহিস্যা ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পারছে না। ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে পানি আমদানি করা লাগতে পারে। সরকারের এসব দেশবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।” 

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়া বলেন, “ভারতের পানিনীতিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে- তাদের (ভারতের) ওপর দিয়ে যে নদী গেছে সেটি যে দেশেরই হোক ভারত পানি নিবেই।”

 

 

 

বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় আগ্রাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়াও তার সরকারের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের পানি সমস্যাটি তুলে ধরেছেন। তারা বলেছিল- এমন কিছু করবে না যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। এখনো শেখ হাসিনাকে মনমোহন সিংহ একই কথা বলছেন। কিন্তু তাদের আগ্রাসী মনোভাব মোটেই দূর হয়নি। ভারতের এমন বন্ধুত্বের দরকার নাই।”

 

 

তিনি বলেন, “দেশের যে সম্পদ আছে সেগুলোর যদি সঠিক ব্যবহার হয়, তাহলে বিদ্যমান সমস্যাগুলো অনেক কমে যাবে।”

 

 

বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “পানি নিয়ে অনেক রাজনীতি ও বাণিজ্য হয়, কিন্তু দেশের স্বার্থে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।”

 

 

তিনি বলেন, “সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পানিনীতি আছে। আমাদের এই পানিনীতি হলো বড় লোকদের জন্য, গরীবদের জন্য নয়। এই নীতি আমরা চাই না।”

 

 

পানি সমস্যাকে দেশের এক নম্বর সমস্যা ঘোষণা এবং এর সমাধান করতে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানান তিনি। একইসঙ্গে যেসব শক্তি বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।

 

 

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পানি ব্যবস্থাপনা ও পানিস্পদ রক্ষণাবেক্ষণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে নদী ও খাল-বিল দখল হচ্ছে এবং নদীতে প্রাণঘাতি বর্জ্য নিঃসরণের ফলে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকার উৎস হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে জমির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখিন।”

 

পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে জনগণের পানির অধিকার ও নিরাপত্তা দেয়ার জোর দাবি জানান বক্তারা।

Exit mobile version