স্বাস্থ্য সংবাদ

যতনে থাকুক মা-বাবা

বাবা-মা সবার চিরদিন বেঁচে থাকে না। শেষ বয়সে তাঁরা যদি সন্তানের একটু সেবা, একটু ভালোবাসা পান তবে অবসর জীবনও হয়ে উঠতে পারে রঙিন। আসুন আমরা জেনে নেই কীভাবে মা-বাবার শেষ বয়সটা একটু সুখময় করে তোলা যায়।যতনে থাকুক মা-বাবা ফারাহ্ বিলকিসখাওয়া-দাওয়া সব মানুষেরই কিছু প্রিয় খাবার থাকে। কিন্তু একটা বয়সের পর খাবারের প্রতি বিধি-নিষেধ তৈরি হয়। […]

Published

on

বাবা-মা সবার চিরদিন বেঁচে থাকে না। শেষ বয়সে তাঁরা যদি সন্তানের একটু সেবা, একটু ভালোবাসা পান তবে অবসর জীবনও হয়ে উঠতে পারে রঙিন। আসুন আমরা জেনে নেই কীভাবে মা-বাবার শেষ বয়সটা একটু সুখময় করে তোলা যায়।যতনে থাকুক মা-বাবা ফারাহ্ বিলকিসখাওয়া-দাওয়া
সব মানুষেরই কিছু প্রিয় খাবার থাকে। কিন্তু একটা বয়সের পর খাবারের প্রতি বিধি-নিষেধ তৈরি হয়। এ কারণে বৃদ্ধ বয়সে পছন্দের খাবার খুব কম খেতে পারেন। সেজন্য আপনার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খাবার তৈরির সময় খেয়াল রাখুন_
রোগভিত্তিক খাবার: বৃদ্ধ বয়সে নানা রকম রোগের কারণেই মূলত খাবারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এেেত্র ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাবা-মায়ের খাবারের তালিকা করুন।
সুষম খাবার : ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সব ধরনের ভিটামিন রাখার চেষ্টা করুন। আমিষ, শর্করা, চর্বির পরিমাণ কমিয়ে সুষম খাবার হিসেবে মৌসুমি ফল, শাক-সবজি, ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে দিন। খাবারে যেন অতিরিক্ত তেল, মসলা না থাকে। খাবার নরম করতে প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিনের খাবারের সময় ঠিক থাকে। অল্প খাবার নির্দিষ্ট সময় পর পর খেলে হজমেও সুবিধা।
খাবারে বৈচিত্র্য : মাঝে মাঝে বাবা-মায়ের পছন্দের খাবার তৈরি করে দিতে চেষ্টা করুন। এতে খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে। বাড়িতে থাকলে খাওয়ার সময় পাশে থাকুন। অনেকের ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চরক্তচাপ থাকে। অনেক রোগী আছে মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। তাদের ডায়াবেটিস মিষ্টি, বিস্কুট কিনে দিতে পারেন। তেমনি যারা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য কলেস্টরলমূক্ত খাবার।

চিকিৎসা
বৃদ্ধ বয়সে প্রয়োজন সময়মতো চেকআপ। আপনি হাসপাতাল, ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাড়ির পাশের ডিসপেনসারির ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। এসব শুধু যে আপনার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য প্রয়োজন তা নয়, আপনারও নিজের দরকার।
ওষুধ গ্রহণ: সময়মতো ওষুধ খাওয়া চিকিৎসা সেবার মধ্যে পড়ে। আপনার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ওষুধ খাওয়ার সময়ের একটা রুটিন তৈরি করে নিন। প্রয়োজনে তাদের ঘরে কিংবা খাবার ঘরের দেয়ালে টানিয়ে দিন। ফলে বাসার সবাই এ ব্যাপারে খেয়াল রাখবে। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপের জন্য আগে থেকেই ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট করে রাখুন।
প্রয়োজনীয় জিনিস : বাসায় প্রেসার মাপার যন্ত্র, ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র, ওজন মাপার যন্ত্র, ব্যান্ডএইড, থার্মোমিটার, ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন। পরিবারের সবাই এসব ব্যবহার শিখে রাখুন। ঘরে বসে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এসব খুব প্রয়োজন।

বাসস্থান
বাবা-মায়ের ঘরটি যেন বড় ও খোলামেলা হয়। ঘরের সঙ্গে যেন লাগোয়া বাথরুম থাকে। বাথরুমের মেঝেতে যেন স্লিপ করার ভয় না থাকে। সপ্তাহে একদিন ভালো করে বাথরুম পরিষ্কার করুন।
আসবাবপত্র : ঘরে খাট, আলমারি, আলনা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রাখুন। খাটের পাশে সাইড টেবিলে প্রতিদিন শোয়ার আগে গ্লাস, পানি, টর্চ, টেবিল ফ্যান, হাতপাখা ইত্যাদি রাখুন। সম্ভাব হলে রাতে কেউ সঙ্গে থাকুন। ঘরে বেড সুইচ ও ডিম লাইটের ব্যবস্থা করুন। ঘরের সঙ্গে যদি বারান্দা থাকে তাহলে সেখানে একটা আর্মচেয়ার রাখতে পারেন। কিছু ছোট গাছ রাখলে ভালো লাগবে।
বিছানায় নরম বালিশ রাখুন। সপ্তাহে একদিন বিছানার চাদর, বালিশের কভার ধোয়ার ব্যবস্থা করুন। ঘরের জানালায় হালকা নেট লাগিয়ে রাখুন। এতে মশা ও ধুলোবালি আসবে না। এ ছাড়াও এয়ার ফ্রেশনার, মশারি, কয়েল, চার্জার লাইট রাখুন। সম্ভব হলে ঘরে আলাদাভাবে এসি, জেনারেটর, আইপিএসও লাগাতে পারেন।

পোশাক
প্রতিদিনের ব্যবহারের কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলুন। স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধ বয়সে পছন্দের রঙের েেত্রও পরিবর্তন আসে । সুতরাং পোশাক কেনার সময় এ ব্যাপারগুলোতে খেয়াল রাখুন।
ল্য রাখুন, পোশাক যেন আরামদায়ক ও সহজে পরিধানযোগ্য হয়।

বিনোদন
বিনোদন মানুষের মনের খাবার। এরজন্য আপনি অবশ্য ল্য রাখুন আপনার বাবা-মা কী পছন্দ করেন। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং সে মোতাবেক বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। অনুমতি নিয়ে তাদের ঘরে আলাদা টিভি, সিডি প্লেয়ার, ক্যাসেট, রেডিও রাখতে পারেন। যদি বই পড়তে পছন্দ করেন তবে পছন্দের বিষয়ের বই পড়তে দিন। তাদের সঙ্গে অবসর সময়ে অথবা বিকালবেলা পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দিন, সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একবার হলেও বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান। আর এেেত্র গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেন। মাঝে মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তন করলে শরীর ও মন ভালো থাকবে। প্রতিদিন বিকেলে এলাকার মাঠ, পার্ক, ছাদে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বের হন। ছুটির দিনে চড়ুইভাতির আয়োজন করতে পারেন। বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের জন্মবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকীর আয়োজন করুন। বাসায় কিছু হালকা ইনডোর গেমসও রাখতে পারেন। আপনার বাবা-মাকে আনন্দ দেবে, তাদের আর নিঃসঙ্গ লাগবে না।

মানসিক শান্তি
মানসিক শান্তি না থাকলে শরীর, মন কোনোটাই ভালো থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় বৃদ্ধদের অনেকের মেজাজ খিটখিটে থাকে। এসব েেত্র ধৈর্য ধরে শুনুন তাঁদের সমস্যা এবং সমাধান করুন। এছাড়া একটু চিকিৎসাসেবা, খাবার সময়ে সাহায্য, বিছানাটা গুছিয়ে রাখা, একটু সময় দেয়া এসবও মানসিক শান্তির মধ্যে পড়ে। সুতরাং আপনি চেষ্টা করুন তাদের মানসিকভাবে ভালো রাখতে।

Advertisement

Trending

Exit mobile version