মোছাব্বের হোসেন
আগের তুলনায় এখনকার মানুষ বেশ স্বাস্থ্য সচেতন।এই শরীরচর্চা সাধারণত দুইভাবে হয়ে থাকে। একটি হলো নিজে নিজে আর একটি হলো কোনো শরীরচর্চাকেন্দ্রে গিয়ে। শরীরচর্চার দিকটিতে মানুষের সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ব্যায়ামাগার। যেখানে একজন দক্ষ নির্দেশকের অধীনে ব্যায়াম করেন সেখানে আসা মানুষেরা। এখন ছেলে বা মেয়েদের আলাদা ব্যায়ামাগার গড়ে উঠছে। এসব স্থানে বেড়েছে দক্ষ নির্দেশকের চাহিদা। আর এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে পেশা হিসেবে শুরু করা যায় ব্যায়ামাগারের নির্দেশকের কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পেশা হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও দিন দিন এর কদর বাড়ছে। ছেলেমেয়ে উভয়ই আসতে পারেন এই পেশায়।
কাজের ধরনটা কেমন
বিভিন্ন ব্যায়ামাগারে মানুষ আসে শরীরটা ঠিক রাখতে। ‘একেক বয়সীদের জন্য একেক ধরনের ব্যায়াম দরকার। আর এসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়াই একজন নির্দেশকের কাজ। এ ছাড়া শরীরচর্চার পোশাক কী ধরনের হবে, কার জন্য কোন ধরনের শরীরচর্চা প্রয়োজন, পাশাপাশি একজন মানুষ কত সময় কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন, কী কী খাবেন—এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেন একজন ব্যায়ামাগারের নির্দেশক।’ জানালেন ঢাকার ইএলবি জিমের সহকারী শরীরচর্চা নির্দেশক মঞ্জুরুল ইসলাম। ব্যায়ামের নানা কৌশল রয়েছে। একজন মানুষকে সেসব কৌশল সম্পর্কেও দক্ষ করে তোলেন একজন নির্দেশক।
কারা আসতে পারেন এই পেশায়
যাঁদের শরীরচর্চার প্রতি টান আছে, তাঁরাই এ পেশার জন্য উপযুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও ব্যায়ামাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদুর রহমান বলেন, ‘যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, এর ওপর ভালো দখল আছে, প্রাথমিকভাবে তাঁরাই শরীরচর্চার নির্দেশনার পেশাটি নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া যাঁরা খেলাধুলায় পারদর্শী ও নিয়মিত শরীরচর্চায় মনোযোগী, তাঁদের জন্যও বেশ ভালো হয় এই পেশা। শরীরচর্চা একটি নেশার মতো। অনেকেই এটা থেকেও এই পেশায় আসতে পারেন বলে জানান আজাদুর রহমান। এই পেশাকে পূর্ণ পেশা হিসেবেও যেমন নেওয়া যায়, তেমনি খণ্ডকালীন পেশা হিসেবেও এটি বেশ উপযোগী। সারা দিন অন্য কাজ শেষে শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামাগারে গিয়ে নিজেও যেমন শরীরচর্চা করা যায়, তেমনি এ সময়ে অন্যদেরও নির্দেশনা দেওয়া যায়। ফলে অন্য পেশার সঙ্গে সঙ্গে এই পেশা হতে পারে বাড়তি এক আয়ের মাধ্যম।
শুরু করবেন কীভাবে
পেশা হিসেবে ব্যায়ামাগারের নির্দেশক হওয়ার আগে এ বিষয়টির ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য আমাদের দেশের শারীরিক শিক্ষার ওপর স্নাতক ডিগ্রির ব্যবস্থা আছে। সরকারি পর্যায়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, বরিশাল ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় শরীরচর্চা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখান থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পর শরীরচর্চার ওপর একটি ভালো ধারণা তৈরি হবে। তবে এটিই শেষ কথা নয়। পাশাপাশি শরীরচর্চায় পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে। বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করতে হবে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে থেকে একটি ডিপ্লোমা করে এলে শরীরচর্চার ওপর একটি শক্ত দক্ষতা অর্জিত হবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে অনেকেই বিভিন্ন ব্যায়ামাগারে ব্যায়াম করতে করতেই এমন দক্ষতা অর্জন করেন, যা দিয়ে অন্যকেও শেখানোর সামর্থ্য রাখেন। তাঁরাও হতে পারেন ব্যায়ামাগারের নির্দেশক।
কাজের ক্ষেত্র
শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামাগারগুলোয় ভিড় করছে নানা বয়সের মানুষ। কিন্তু এসব স্থানে দক্ষ নির্দেশকের সংকট রয়েছে। তাই এ কাজে দক্ষ হয়ে আপনি সহজেই পেশা হিসেবে ব্যায়ামাগারের নির্দেশকের কাজ পেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলগুলোর ব্যায়ামাগারে দক্ষ নির্দেশক খোঁজ করা হয়। এসব স্থানেও যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। বড় বড় শপিংমলে গড়ে উঠছে আধুনিক ব্যায়ামাগার। দক্ষ ব্যায়ামাগার নির্দেশকের চাহিদা বাড়ছে ও নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে।
নিজেই খুলতে পারেন একটি প্রতিষ্ঠান
দক্ষ ব্যায়ামাগার নির্দেশক হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর অর্জিত দক্ষতা থেকে নিজেই চালু করতে পারেন একটি প্রতিষ্ঠান। খোলামেলা একটি কক্ষ যেখানে সহজে আলো-বাতাস আসে, মানুষের যাতায়াত সহজ হয়, এমন স্থানে হতে পারে আপনার ব্যায়ামাগারটি। যেহেতু আপনার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা আছে, সেহেতু বিভিন্ন ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি কেনা, এগুলো স্থাপন করা আপনার জন্য সহজ হবে। ব্যায়ামাগারে বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। চাইলে সপ্তাহে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে এসে আগতদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারেন। এতে আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। এভাবে একটি সময় অর্জিত দক্ষতা ব্যবহার করে আপনি নিজেই একটি ব্যায়ামের প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন।