হাঁটাহাঁটি বা জগিংয়ের টুকিটাকি

নিয়মিত শরীরচর্চার সময় করে উঠতে পারেন, এমন মানুষ এখন কম। তবে রোজ একটু সময় করে হাঁটাহাঁটি বা জগিং করাটা নিশ্চয়ই খুব কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। এতে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, তেমনি সময়ও বেশি লাগবে না।

জগিংয়ের প্রস্তুতি
এলবি ফিটনেস সেন্টার, মগবাজার শাখার প্রশিক্ষক মো. মাসুদ পারভেজ জানালেন জগিং সম্পর্কে। জগিং করার শুরুতেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে যে আপনি সকালে নাকি সন্ধ্যায় জগিং করবেন। সকালে জগিং করার আগে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে আধা গ্লাস পানি খেয়ে নিন। সঙ্গে থাকতে পারে একটা বিস্কুট ও একটা কলা। এবার পায়ে দিন আরামদায়ক কোনো কেড্স বা কাপড়ের জুতা। কেননা মোজা ব্যবহার করলে অনেকের পায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। নিজের আরাম বুঝে মোজা পরুন। পোশাক ঢিলেঢালা হওয়া চাই। আরামদায়ক ট্রাউজার বা খাটো প্যান্ট ও টি-শার্ট পরতে পারেন। আবার মেয়েরা ঢিলে সালোয়ার-কামিজও পরতে পারেন। তবে শাড়িটা এড়িয়ে চলাই ভালো। শাড়ি পরে জগিং করা বিপজ্জনক। যেকোনো সময় শাড়িতে জড়িয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। সঙ্গে পানির বোতল আর তোয়ালে নিয়ে নিন। অনেকেই জগিংয়ের ফাঁকে প্রচুর পানি পান করে। এটা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু গলাটা ভিজিয়ে নিতে হবে পানিতে। যাঁরা নতুন জগিং করবেন, তাঁদের প্রথম অবস্থায় বেশি দৌড়ানো ঠিক নয়। বিশেষ করে যাঁরা হূদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জগিং করতে হবে হালকাভাবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় শুধু হাঁটা যেতে পারে। যাঁরা হূদযন্ত্রের সমস্যা বা বহুমূত্রে ভুগছেন, তাঁদের জগিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। এ সম্পর্কে বললেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিরেক্টরেট জেনারেল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হূদযন্ত্রের রোগীদের সাবধানে হাঁটতে হবে। কেননা জগিংয়ের সময় হূদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়। আর যাঁদের বহুমূত্র আছে, তাঁদের পা যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জগিং করার সময় শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। তাই জগিং শেষে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন। এ সময় পানি বা জুস পান করতে হবে।’ জগিং করা সবচেয়ে ভালো খোলা মাঠে ঘাসের ওপর। এ ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে জুতা খুলে খালি পায়ে সবুজ ঘাসের ওপর হাঁটা যেতে পারে।

জগিংয়ের পর
জগিংয়ের শেষে বসে জিরিয়ে নিতে হবে। অনেকে ইচ্ছে করলে শবাসনে বিশ্রামও নিতে পারেন। এবার একটু একটু করে পানি বা জুস খেতে হবে। এ সময় ঘামে-ভেজা পোশাক পরিবর্তন করে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে। জগিং শেষে বাসায় ফিরে গোসল করে নিন। এরপর তিন-চার টুকরা পাউরুটি, একটা কলা, অন্য যেকোনো একটি ফল, আধা গ্লাস দুধ (সর ছাড়া) খেয়ে নিতে পারেন। এগুলো খাবার আগে আপনি ইচ্ছে করলে আগের দিন রাতের ভিজিয়ে রাখা কাঁচা ছোলা খেতে পারেন।

কয়েকটি টিপস
# আজকাল জগিংয়ের সময় অনেকেই কানে হেডসেট লাগিয়ে নেন। এতে গান শোনাও হয়, জগিংও হয়। ফলে জগিং আর বিরক্তিকর মনে হয় না।

# জগিংয়ের সময় কোনো বন্ধুকে সঙ্গে নিতে পারেন। এতে সময়টা ভালো কাটবে।

# প্রতিদিন জগিং শেষে আপনার পোশাক পরিষ্কার করে রাখুন। ব্যবহূত মোজা ধুতে ভুলবেন না যেন।

# জগিং করার শুরুতে ওয়ার্ম আপ বা গা গরম করে নিন। একেবারে বেশি বা একটানা জগিং করবেন না। পেশিতে টান পড়তে পারে।

# শুধু জগিং করলেই হবে না। নিজের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনুন। কার্বোহাইড্রেট ও হাই প্রোটিন এড়িয়ে চলুন। শাকসবজি বেশি খান।

# জগিং করার ফাঁকে একটু একটু করে পানি খান। একসঙ্গে অনেক পানি খাবেন না। পেটে ব্যথা হতে পারে।

# যাঁরা সকালে জগিং করতে পারবেন না, তাঁরা সন্ধ্যায় বা বিকেলে জগিং করতে পারবেন। কর্মস্থল থেকে এসে একটু জিরিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন জগিংয়ে।

# প্রথম অবস্থায় অল্প সময় ধরে জগিং করুন। বিশেষ করে যাঁরা অতিরিক্ত মোটা, তাঁরা প্রথমেই বেশি জগিং করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

# ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার বা ফল বেশি খান। এতে শরীরের চর্বি কাটে তাড়াতাড়ি। ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন।

# স্বাভাবিক নিয়মে প্রত্যেক মানুষকে কমপক্ষে তিন হাজার পদক্ষেপ নিতে হয় প্রতিদিন। এর চেয়ে কম হলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। জগিং করার ফলে আপনার প্রতিদিনকার অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি ক্ষয় হয়ে যায়।

# জগিংয়ে শরীর বেশি ঘামলে পোশাক মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করে নিতে পারেন।

Exit mobile version