মরণোত্তর চৰুদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দেশ থেকে অন্ধত্ব দূর করতে এ কার্যক্রম সহায়ক হবে। মরণোত্তর চক্ষুদানে ধর্মীয় বাধানিষেধ নেই, এ কথা ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি এবং আপামর জনগণকে বোঝাতে হবে। এটা করতে পারলে আমাদের দৃষ্টিহীন ভাইবোনদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া সহজতর হবে।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চৰুদান দিবস-২০১০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্বাস্থ্য সচিব এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রম্নহুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সোসাইটির মহাসচিব ডা. হাবিব-ই-মিল্লাত। রাষ্ট্রপতি বলেন, জনসম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে যে কোন অপারেশন, দুর্ঘটনায় আহত বা অন্য কোন রোগীর রক্ত প্রদানে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রক্ত সংগ্রহে ব্যাপক প্রচার, জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও উপযুক্ত কাউন্সিলিং করতে পারলে যুবসমাজ রক্তদানে উৎসাহিত হবে এবং আমাদের প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা পূরণ হবে। তিনি সন্ধানীর আর্ত-মানবতার সেবাকে অতুলনীয় বলে উলেস্নখ করেন। দুস্থ ও অসহায় রোগীর জীবন রক্ষা ও দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে তাদের মহতী অবদানের প্রশংসা করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগের পাশাপাশি বিগত সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করা হয়েছে। নার্সিং পেশাকে আরও মর্যাদাশীল করা হয়েছে। তিনি বলেন, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে সরকার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে গ্রহণ করে জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুমৃতু্য হার রোধে উলেস্নখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ এমডিজি পুরস্কার লাভ করেছেন। এ অর্জন বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেশকিছু সংগঠন স্বাস্থ্য উন্নয়নের কাজ করছে। সন্ধানী তাদের অন্যতম। মরণোত্তর চৰুদান আন্দোলনে তাদের কার্যক্রম আরও বেশি উৎসাহব্যঞ্জক। নিরাপদ রক্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক বড় সমস্যা। স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চৰুদানের মতো মহৎ কাজে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ডা. আফম রুহুল হক রক্তদান কর্মসূচীর মতো মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচীতেও অবদান রাখার জন্য বেসরকারী সংগঠনগুলোকে আহ্বান জানান। সন্ধানীর নতুন ভবনে দেশের প্রথম আধুনিক চৰুব্যাংক স্থাপন করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ডা. মিলস্নাত বলেন, সন্ধানী এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত ও ৩ হাজার ৫শ’ মরণোত্তর কর্নিয়া সংগ্রহ করেছে। দেশে বছরে চার লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। সন্ধানী ও অপরাপর সংস্থাগুলো দুই লাখ ব্যাগ রক্তের যোগান দিতে সক্ষম। তিনি বলেন, ১৮ থেকে ৫৭ বছর বয়সী সাধারণ মানুষ যদি প্রতি পাঁচ বছরে একবার রক্ত দান করেন তাহলে ৪০ লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব। এটি আমাদের চাহিদার চেয়ে দশগুণ বেশি বলে জানান ডা. মিল্লাত।