প্রায়ই এমন অনেক রোগী দেখা যায় যারা সব সময়ই অস্বস্তি অনুভব করেন। মাথা ব্যাথ্যা আর জ্বালা পোড়া করে কিন্তু জানেন না কেন? এ ধরনের রোগীর সাইনোসাইটিস হতে পারে, যা একেবারেই সাধারণ দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা।
এটা ছিল সম্প্রতি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষণার উপসংহার।
সাইনাস সমস্যা বুঝবেন কি করে
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের একজন ইন্টার্নিস্ট, ড. আলেক্সান্ডার চেস্টার, তার প্রায় ৩০০ জন রোগীর উপর সার্ভে করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি ধারণা পেলেন এরকম, যে সকল রোগীর দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তি, ক্লান্তিভাব থাকে এবং তারা সেটা প্রকাশ করতে পারে না এমন রোগীর সাইনোসাইটিস সিম্পটম থাকাটা প্রায় নয়গুণ। আর যেসব রোগীর অব্যাখ্যায় শরীর ব্যাথা থাকে তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রায় ৬ গুণ।
চেস্টারের মতে সাইনোসাইটিস-এর সাধারণ সিম্পটমগুলো হলো এরকম: মুখমণ্ডলে চাপ, অসম্ভব মাথা ঝিমানো অথবা মাথার সামনের দিক ব্যাথা করা ইত্যাদি।
ড. চেস্টারের গবেষণায় তিনি জানালেন, এটা সবারই এখন জানা যে, সাইনোসাইটিসের কারণে মাথা ব্যাথা এবং অস্বস্তিবোধ সৃষ্টি হয়। তবে অধিকাংশ মেডিকেল ডাক্তারগণ এ সম্বন্ধে খুব একটা ওয়াকিবহাল না, কারণ এ ধরনের রোগী পেলে ডাক্তাররা ওটোলারিনগোলজিস্টদের রেফার করে দেন। (সাইনোসাইটিস রোগের ডাক্তারদের বলা হয় ওটোলারিনগোলজিস্ট)। চেস্টারের মতে সকল ডাক্তারকে অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত সাইনোসাইটিস অস্বস্তি এবং ব্যাথা সৃষ্টি করে।
যাই হোক, ড. চেস্টার গবেষণা কাজে সার্ভে করেছিলেন তার দুইশত সাতানব্বই রোগীর উপর-এর ভেতর মহিলা-পুরুষ কারো বয়সই ৪১ উর্ধ্ব ছিল না, আর বয়সের গড় ছিল ৩০ বছর। এমটা করা হয়েছিল বৃদ্ধ বয়সে অন্যান্য রোগের জটিলতা এড়ানোর জন্য।
৬৫ জন রোগী (২২%) তাদের অব্যাখ্যায় দীর্ঘস্থায় অস্বস্তিবোধের কথা জানালেন যা কিছুদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যায়; আর ৩৩ জন রোগী (১১%) জানালেন তাদের অব্যাখ্যায় শরীর ব্যাথার কথা। যদিও এই গবেষণায় মহিলাদের চাইতে পুরুষের সংখ্যা বেশি ছিল (৪৬%), দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তিবোধ পুরুষের চাইতে মহিলাদের দেখা গেল অনেক বেশি (৪২%:৬০%)।
গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ড. চেস্টার জানালেন, যারা অব্যাখ্যায় দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তিবোধের কথা জানান, তাদের সাইনোসাইটিস থাকার সম্ভাবনা যাদের এমনটি নেই তাদের থেকে নয়গুণ বেশি। অন্যদিকে এই পরিমাণ অব্যাখ্যায় শরীর ব্যাথার ক্ষেত্রে প্রায় ৬ গুণ।
সাইনোসাইটিস : বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
চেস্টারের মতে, ‘অধিকাংশ মানুষই সাইনোসাইটিস-এর ব্যাপারে মোটেই সতর্ক নন। সাইনাস সমস্যা ছাড়াও মানুষের অস্বস্তি বা অস্থিরতা বোধ হতে পারে। তবে আমার আশা মানুষের মধ্যে সতর্কতা, সচেতনতা এবং সাবধানতা গড়ে উঠবে যে, অস্থিরতা কিংবা অস্বস্তিবোধ সাইনোসাইটিস-এর কারণে হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের একজন সাইনোসাইটিস রোগের ডাক্তার ড. ফিলিপ পার্লম্যান জানালেন, সাইনোসাইটিস-এর প্রথম পাঁচটি সিম্পটসের ভেতর একটা হলো অস্থিরতাভাব। অন্যগুলো হলো- ব্যাথ্যা, মুখে চাপ অনুভব (দুই নাকের পাশে), nasal congestion(নাকে রক্ত আসা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি) এবং জ্বর।
সাইনোসাইটিস : সুখবর
অধিকাংশ ডাক্তারগণ এখন মনে করেন যে, সাইনোসাইটিস নাকের ভেতর এক ধরনের প্রদাহ যা সৃষ্টি হতে পারে ঠাণ্ডা, কাশি, এলার্জি বা অন্য কোনো ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে। এধরনের প্রদাহ নাকের ভেতর জায়গাকে এতটাই ছোট ও চিকন করে ফেলে এতে করে মিউকাস ঠিকমতো ড্রেইন হতে পারে না। এর ফলে অস্বস্তি আবার কখনো ইনফেকশনও হতে পারে।
এটার চিকিৎসা না করলে সাইনোসাইটিস দীর্ঘতর হতে পারে। প্রথমে সপ্তাহ, তারপর কয়েকমাস, এভাবে বছরের পর বছরও এটা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
সুখবর হলো- বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের নাজাল স্প্রে, এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যেগুলো ব্যবহারের ফলে নাকের বিভিন্ন ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া যারা সাইনোসাইটিসের জন্য দায়ী তারা ধ্বংস হয়ে যায়।