Site icon স্বাস্থ্য ডটটিভি

মেডিকেলে ভর্তি : দরিদ্র মেধাবী কোটা নিয়ে বিপাকে স্বাস্থ্য অধিদফতর

চলতি বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দরিদ্র মেধাবী কোটায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই সংরক্ষিত এই প্রভাবশালী ধনীরা গোপনে তদবির করছেন! অভিযোগ উঠছে, প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে বহুসংখ্যক ধনাঢ্য ব্যক্তি নিজ বা নিকটাআত্মীয়দের সন্তানদের ভর্তির সুযোগ করে দেয়ার জন্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছেন!
তদবিরকারীর এ তালিকায় একাধিক মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মন্ত্রী, সচিব, সরকারি ঊর্ধ্বতন, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক নেতা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই দরিদ্র মেধাবী কোটায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি করত। কিন্তু হালনাগাদকৃত ভর্তি নীতিমালা (২০১০) এ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি কমিটির মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী কোটায় ভর্তির বাধ্যবাধকতা নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২২ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আমীর হোসেনকে সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. খন্দকার মোঃ শিফায়েত উল্লাহকে নিয়ে আট সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন ও চিকিৎসা শিক্ষা) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডিন (মেডিকেল ফ্যাকাল্টি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রেজিস্ট্রার বিএমডিসি, সভাপতি বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন, অধ্যক্ষ হলিফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, হালনাগাদ ভর্তি নীতিমালার কারণে দরিদ্র ও মেধাবী কোটায় ভর্তি নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়ার আশংকা করছেন। সংরক্ষিত কোটায় এখনও ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু না হলেও প্রতিদিন অধিদফতরের ভর্তি শাখায় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসংখ্য টেলিফোন ও মোবাইল ফোন আসছে। ভর্তির জন্য এখনও সরাসরি তদবির না করলেও ইশারা-ইঙ্গিতে পছন্দের ছাত্রছাত্রীকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলে রাখছেন। কেউবা সংরক্ষিত দরিদ্র মেধাবী কোটায় ভর্তির সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কখন তা জানতে চাচ্ছেন। ১৫ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাধারণ আসনে ভর্তি চলছে। প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি জাতীয় মেধাতালিকার ১০ হাজারের তালিকা থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তির বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পর্যন্ত স্ব স্ব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইন্টারভিউ গ্রহণের মাধ্যমে সংরক্ষিত দরিদ্র মেধাবী কোটায় নিজেরাই ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাত। চলতি বছর ভর্তি নীতিমালা-২০১০ হালনাগাদকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটির মাধ্যমে শতকরা ৫ ভাগ আসনে দরিদ্র মেধাবী কোটায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়। জারিকৃত নীতিমালায় বলা হয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে গরিব মেধাবীদের কাছ থেকে পৃথকভাবে দরখাস্ত আহ্বান করবে। আবেদনকৃত গরিব শিক্ষার্থীদের বাছাই, ভর্তির জন্য কলেজ নির্ধারণ ইত্যাদি সব কার্যক্রম ওই কমিটি পরিচালনা করবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচিত ছাত্রছাত্রীকে সংশ্লিষ্ট কলেজ ভর্তি করবে। চিকিৎসা শিক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, ভর্তি নীতিমালায় দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে দরিদ্র পরিচয়ে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরা ভর্তি হয়ে থাকে। সরকারিভাবে কঠোর মনিটরিং না থাকায় কলেজগুলো পরিচয় গোপন করে ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা ডোনেশন নিয়ে সংরক্ষিত আসনে তাদের ভর্তি করে। তারা বলেন, এতদিন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো নিজেদের পছন্দ মতো ভর্তি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন ডোনেশনের টাকা হাত বদলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পকেটে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা সহজ হবে না। রাজধানীসহ ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ থেকে যেসব আবেদন আসবে তাদের মধ্যে কে প্রকৃত দরিদ্র আর কে ধনী হয়েও দরিদ্র কোটায় ভর্তি হতে চাচ্ছে তা নির্ণয় করা কঠিন হবে। তাছাড়া ভর্তি নীতিমালায় দরিদ্র নিরূপণে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দরিদ্র মেধাবী কোটায় ভর্তির জন্য একটি কমিটি হলেও মূলত যাচাই-বাছাইসহ কাজটি তাদের ওপরই বর্তাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা উদাহরণ টেনে বলেন, একজন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদন একাধিক কলেজে করতে পারে। নিয়মানুসারে যোগ্যতা থাকলে সব মেডিকেল কলেজেই তার নাম উঠবে। সেক্ষেত্রে একটি কলেজ বাদে অন্য কলেজে ভর্তি না হলে ওই কোটায় ভর্তির জন্য একাধিকবার যাচাই-বাছাই করতে হতে পারে। ফলে তাদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে।

Exit mobile version