মালাই-চিঁড়ার মজা

ব্যস্ত রাস্তার জ্যাম ঠেলে যখন পুরান ঢাকায় পৌঁছাবেন, তখন মনে থাকবে একরাশ বিরক্তি। আর সময়টা যদি হয় গ্রীষ্মকাল, তবে তার সঙ্গে যোগ হবে বুকের ছাতি ফাটানো তেষ্টা। কেমন হবে তখন যদি লাচ্ছি বা আইসক্রিমের বদলে এমন একটা খাবারের খোঁজ পেয়ে যান, যা দিয়ে পেটের পাশাপাশি মনটাও ঠান্ডা হয়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের নর্থব্রুক হল রোড দিয়ে এগিয়ে গেলে হাতের বাঁ দিকে পড়বে প্যারিদাস রোড। এই রোডে ঢুকতেই দেখা মিলবে ছোট্ট একটি দোকানের। এর নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সেতাবুর এন্ড সন্স। আলাদা করে কোনো বৈশিষ্ট্য চোখে পড়বে না এটির। কিন্তু ভেতরে গেলেই পাবেন এক ভিন্নমাত্রার খাবারের স্বাদ। ছিমছাম দোকানটিতে নেই কোনো আভিজাত্য। কিন্তু এখানকার বিশেষ খাবারটি এতটাই সুস্বাদু যে আলাদা করে এখন আর কাউকে চেনাতে হয় না দোকানটিকে। সবাই এক নামে চেনে ‘মালাই-চিঁড়ার দোকান’।
পুরান ঢাকা খাবারের জন্য বিখ্যাত। দই-চিঁড়া পাওয়া যায় অনেক দোকানেই। তাই এই দোকানের উদ্যোক্তা আবদুল খালেক চেয়েছিলেন একটু ভিন্ন কিছু করতে।
ছোট হলেও দোকানটি সব সময়ই থাকে পরিপূর্ণ। শীতের সময় লোকজন তেমন না এলেও গরমের সময় ভিড় লেগেই থাকে। ছোট কিন্তু ব্যস্ত এই দোকানটি সামলান আবদুল খালেকের ছেলে সাদ্দাম তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দোকানে যা কিছু পাওয়া যায়, সবই স্বাস্থ্যসম্মত। মানিকগঞ্জে আমার বড় ভাইয়ের মালাইয়ের কারখানা আছে। সেখান থেকে আনা হয় মালাই। আর আমার মেজোভাই বাড়িতেই বানান দই। কেবল কলা আর চিঁড়াটা কেনা। এই খাবারে যা কিছু দেওয়া হয় তার সবই ঠান্ডা। তাই গরমের সময় ভালো লাগে বেশি। পেটেরও কোনো ক্ষতি হবে না এই খাবারটা খেলে।’
প্রায় ২৫-২৬ বছর হতে চলল এই ব্যবসা করছেন তালুকদার-পরিবার। সাদ্দাম তালুকদার আরও বলেন, ‘আমার বাবা আগে শরবতের সঙ্গে চিঁড়া মিশিয়ে বিক্রি করতেন। একদিন এই মালাই খাওয়ার পর তাঁর মনে হয় এটা দিয়েও তো চিঁড়া খেতে ভালো লাগবে। তখন তিনি এই খাবারটা তৈরি করে বিক্রির কথা চিন্তা করেন। আগে বাবা যে শরবত দিয়ে চিঁড়া বিক্রি করতেন তার নাম ফুলকলি শরবত। বিভিন্ন ফল একসঙ্গে মিশিয়ে সেই শরবত তৈরি করা হতো। কিছুদিন পর আমাদের এখানে আবার সেটা পাওয়া যাবে।’
মালাই-চিঁড়ার আরেকটি দোকান আছে সদরঘাটে লেডিস পার্ক মসজিদের নিচে। সেখানে বসেন সাদ্দাম তালুকদারের বড় ভাই শরীফ তালুকদার। আবদুল খালেক এখন এসব ব্যবসা-বাণিজ্য ছেলেদের ওপর ছেড়ে দিয়ে মন দিয়েছেন অন্যদিকে। তালুকদারের এই দুটি দোকানেই পাওয়া যায় মালাই-চিঁড়া।
মালাইকে বলা যায় ঘন দুধ। দুধ অনেক সময় জাল দিয়ে দিয়ে এই মালাই তৈরি করা হয়। তারপর এতে একটু দই, ভেজানো চিঁড়া আর কলা দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
গরমের কাঠফাটা দুপুরে খেয়েই দেখুন না।

দরদাম
এখানে এই মজাদার খাবার পাওয়া যাবে অনেক কম দামে। এক বাটি মালাই-চিঁড়ার দাম পড়বে ২০ টাকা। আর আধা বাটির দাম পড়বে মাত্র ১৫ টাকা। অবশ্য স্পেশাল মালাই-চিঁড়ার দাম একটু বেশি পড়বে। তবে স্বাদটাও মিলবে বেশি। স্পেশাল আধা বাটির দাম ২৫ টাকা আর ফুল বাটির দাম ৫০ টাকা।
শুক্রবার বন্ধ থাকে দোকান দুটি।

Exit mobile version