আপনার শিশু কি হা করে ঘুমায়?

আপনার শিশু কি হা করে ঘুমায়?
আপনার শিশু কি হা করে ঘুমায়?
॥ ডা. সজল আশফাক ॥  একমাস পরেই শীর্ষ’র বয়স হবে পাঁচ। সামনে স্কুলের পরীক্ষা। কিন্তু প্রায় সময়েই সে অসুস্থ থাকে। তার অসুস্থতার ধরনটা একটু ভিন্ন। অসুখের তীব্রতা দিনের বেলায় খুব একটা বোঝা যায় না। সকাল বেলা ঘুম ভাঙে নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরার অস্বস্তিকর ঘটনা দিয়ে। দিনের প্রায় পুরো সময়টাই নাক টানতে থাকে শীর্ষ। বারবার নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করিয়ে দিতে হয়।

ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শে দেয়া হয় সর্দি কমানোর ওষুধ। মাসের পর মাস ওষুধ চলছে। কিন্তু অবস্থার খুব একটা উন্নতি করা যাচ্ছে না। শুধু নাক বন্ধই নয়, মাঝেমধ্যে দেখা দেয় কাশি ও হালকা জ্বর। তখন এন্টিবায়োটিক, এন্টি হিস্টামিন, নাকের ড্রপ ইত্যাদি দেয়ার ২/৪ দিন পর কিছুটা সুস্থ হয়। তবে এ অবস্থা স্থায়ী হয় না। এভাবেই চলছে গত ২ বছর ধরে। কিন্তু সমস্যা কমছে না বরং একটু একটু করে বাড়ছে। মাসখানেক হলো রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়।

গভীর ঘুম হয় না। আধো ঘুম অবস্থায় সারারাত এপাশ ওপাশ করে, নাক ঘষে, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে। শুয়ে ঘুমোতে না পেরে চোখ বুজে বসে থাকে। এ অবস্থায় আর কালক্ষেপণ না করে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলেন শীর্ষ’র বাবা-মা। ডাক্তার শীর্ষকে পরীক্ষা করে ন্যাসোফ্যারিংস অর্থাৎ নাসা গলবিল অঞ্চলের একটি এক্স-রে করাতে দিলেন।

এক্স-রে দেখে ডাক্তার বললেন, শীর্ষ’র এডিনয়েডের সমস্যা হয়েছে। অপারেশন করাতে হবে। অবশেষে অপারেশন হলো। এখন বেশ ভালো আছে শীর্ষ। ক্রমশ সুস্থ শিশুতে পরিণত হচ্ছে সে। শীর্ষ’র মতো এ ধরনের এডিনয়েড সমস্যায় অনেক শিশুই ভুগছে। এডিনয়েড শব্দটি অপরিচিত হলেও সমস্যাটি কিন্তু হরহামেশাই দেখা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমেরিকায় যেসব কারণে শিশুদের অপারেশন করা হয় তার অন্যতম হচ্ছে এডিনয়েড অপারেশন। অপারেশনের ২/৩ দিনের মধ্যেই শিশু সুস্থ এবং ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে শিশু সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কাজেই শিশুর এডিনয়েড সমস্যাকে খাটো করে না দেখে সময়মতো চিকিৎসা করিয়ে শিশুকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

এডিনয়েড ৩ থেকে ৭ বছরের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বেশি বড় হয় এবং ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে এটি ছোট হতে থাকে। কারও বেলায় এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেই ঘটে বিপত্তি। তখন বিষয়টিকে এডিনয়েডগ্রন্থি বড় হওয়াজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

মনে করা হয়, বারবার ঊর্ধ্বশ্বাসনালীর ইনফেকশন এডিনয়েডের ওপর প্রভাব ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে এডিনয়েড আকারে বড় হয়ে যায়। এছাড়া এলার্জিজনিত কারণেও এডিনয়েড বড় হয়ে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শিশুর নাক বন্ধ থাকার কারণে শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ বিঘি্নত হয়। ফলে শিশুর বুদ্ধাঙ্ক কম হয়। এছাড়া শিশু ক্রমাগতভাবে কম শোনার কারণে ক্লাসে অমনযোগী হয়ে পড়ে, পড়াশোনায় খারাপ করে এবং শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়। একপর্যায়ে শিশুর মধ্যকর্ণের ইনফেকশন জটিল হয়ে কানের পর্দা ফুটো করে দেয় এবং শিশু কানপাকা রোগের নিয়মিত রোগী হয়ে যায় অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা বা ‘সিএসওএম’ রোগে আক্রান্ত হয়।

লেখক : ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ,
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফোন : ০১৭১৬৩০৬৬৩১

Exit mobile version