ডায়াবেটিস শৃঙ্খলায় যার মুক্তি

প্রথম যখন কারও ডায়াবেটিস ধরা পড়ে,সীমাহীন অসহায়ত্ব গ্রাস করে তখন। অনেকে আছেন যারা ভয়ে রক্তের গ্গ্নুকোজ পরীক্ষাই করান না। পাছে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে যায়। অথচ যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে জটিলতা ততই কমবে। সুতরাং এ রোগ নিয়ে বলার, শোনার বা আলোচনা করার প্রয়োজন তো আছেই। সেই প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে স্মরণ করিয়ে দিতে আগামী ১৪ নভেম্বর পালিত হবে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’। ডায়াবেটিস হলো হরমোনজনিত রোগ।

এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ইনসুলিন। ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয় থেকে। ইনসুলিন তৈরি কম হলে বা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে গিয়ে ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে শরীরে গল্গুকোজ বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। একে অবশ্যই সহনীয় মাত্রায় রাখে ইনসুলিন। কিন্তু কার্যস্থলে ইনসুলিনের ঘাটতি ঘটলে গল্গুকোজ বেড়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক, কিডনি, চোখসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে : ঘন ঘন প্রস্রাব, পিপাসা পাওয়া, ক্ষুধা লাগা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, অমনোযোগিতা ইত্যাদি। এসব দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তের গল্গুকোজ পরীক্ষা করা উচিত। তবে কোনো লক্ষণ না থাকলেও যাদের বয়স ৪০-এর বেশি, যাদের পরিবারে কারও ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন বেশি, যারা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো উচিত। ধরন অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু এটি হলো ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার মাত্র একটি উপাদান। আসল হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণ। শুধু চিনি খেলেই যে রক্তে গল্গুকোজ বাড়বে তা কিন্তু নয়। আমাদের দৈনন্দিন যে খাবার অর্থাৎ ভাত, রুটি_ এসবই শরীরে ভেঙে গল্গুকোজে পরিণত হয়। এসব বেশি খেলেও ডায়াবেটিস খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে। তাই পরিমাণমতো ডায়াবেটিস খাবার গ্রহণ করা উচিত। এজন্য চিকিৎসকের পাশাপাশি পুষ্টিবিদদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ব্যায়াম মানে খুব দামি ইনস্ট্রুমেন্ট কিনে, আয়োজন করে কসরত করা নয়। জিমে বা দূরের পার্কে যেতে হবে, তাও নয়। যারা ইনসুলিন নেন তারা অবশ্যই চিনি বা মিষ্টি জাতীয় জিনিস সঙ্গে রাখুন। নয়তো রক্তের গল্গুকোজ খুব কমে গিয়ে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
শিশুরাও আজকাল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। সুতরাং তাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। আধুনিক বিশ্বে শিশুর ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ হলো তাদের অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, আইসক্রিম, চকোলেট, পেস্ট্রি, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং পর্যাপ্ত খেলার ব্যবস্থা করাটা জরুরি। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সারাজীবন সুস্থভাবে কাটিয়ে দিচ্ছেন, এমন হাজারও দৃষ্টান্ত রয়েছে। অথচ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মাধ্যমে এসব জটিলতা অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. রোকেয়া বেগম
ডোয়াবেটলজিস্ট ও ডিরেক্টর, কম্প্রিহেনসিভ হেলথ প্রজেক্ট

 

Exit mobile version