প্রধান খবর
মেডিসিন-ফিজিওথেরাপির সমন্বয়ে সম্মিলিত চিকিৎসা পদ্ধতির আহ্বান
দেশে প্রতিবছর স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে শুধু হাসপাতালে ওষুধনির্ভর চিকিৎসা গ্রহণের পরও এসব রোগী অনেক সময় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। চিকিৎসকদের মতে, মেডিসিনের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপির সমন্বয়ে গঠিত একটি সম্মিলিত চিকিৎসা পদ্ধতিই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথ খুলে দিতে পারে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তসলিম উদ্দিন। ‘জাতীয় ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন দিবস’ উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক তসলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের গড় আয়ু বাড়ছে, কিন্তু কর্মক্ষমতা কমছে। শুধু ওষুধ খেলে কাজ হবে না। তিনটি রোগ— স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও ক্রনিক ডিজিজে ৭০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারলে রোগীদের পুনরায় স্বনির্ভর ও কার্যকর জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ৭ জনে একজন কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার। আমরা চাই, যে প্রতিষ্ঠানে এমন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে, সেখানেই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ করে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে।
ফিজিওথেরাপি পেশার দুর্বল কাঠামো নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনও ‘রিহ্যাবিলিটেশন নার্স’ তৈরি করার মতো কোনো কোর্স নেই। শুধু ডাক্তার থাকলে হবে না, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং রিহ্যাবিলিটেশন নার্স তৈরি করতে হবে। এর জন্য আইন, নীতি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখন প্রায় প্রতিটি মানুষেরই কোনো না কোনো ব্যথা বা শারীরিক সমস্যা আছে, যা ফিজিওথেরাপির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের ‘জাতীয় ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন দিবস’-এর প্রতিপাদ্য— ‘সমন্বিত পুনর্বাসনে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা।’ দিবসটি উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় একটি র্যালি এবং সাড়ে ১০টায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে এম এ কে আজাদ বলেন, একটি দেশ তখনই প্রকৃত অর্থে উন্নত হয়, যখন সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা কমে আসে, প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা থাকে এবং যারা প্রতিবন্ধী, তাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও জীবনযাপনে পূর্ণ সহায়তা ও সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন ইউনিটকে শক্তিশালী করা জরুরি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল নিয়োগ, জনসচেতনতা বাড়ানো, বিদ্যমান আইন কার্যকর করা, নতুন আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল প্রতিবন্ধী বান্ধব সমাজ গঠন সম্ভব। এ জন্য স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র ও সড়ক-পরিবহনসহ প্রতিটি স্থাপনায় ইউনিভার্সাল ডিজাইন মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিকল্পনা ও নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি।