প্রধান খবর

ঝুলে আছে ১,০০০ ওষুধের নিবন্ধন, ট্রিপস ছাড় হারানোর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

Published

on

জেনেরিক ও বায়োসিমিলার ওষুধের এক হাজারেরও বেশি নিবন্ধনের আবেদন প্রায় আড়াই বছর ধরে ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এরমধ্যে বাংলাদেশের আসন্ন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের ফলে ট্রিপস চুক্তির আওতায় পাওয়া ওষুধ সংক্রান্ত পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা শেষ হয়ে যাবে।

ট্রিপস (বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার) হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। ডব্লিউটিও সদস্য বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকায় এই চুক্তির অধীনে বিশেষ ছাড় সুবিধা ভোগ করছে, বিশেষত ওষুধের পেটেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে।

সরকার নির্ধারিত ওষুধ অনুমোদন কমিটি—ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)—গত সপ্তাহে বৈঠক করলেও এসব আবেদন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা এসব আবেদনের মধ্যে ক্যান্সারের ওষুধ থেকে শুরু করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বায়োসিমিলার ওষুধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ওষুধশিল্পের নেতারা বলছেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণের আগে ট্রিপসের সব বাধ্যবাধকতা পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। যদি ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে অপেক্ষমাণ এসব ওষুধ নিবন্ধন না হয়, তবে সেগুলোকে ট্রিপসের আওতায় থাকা ছাড় সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ হারাতে পারে বাংলাদেশ।

Advertisement

প্রাণরক্ষাকারী ওষুধের দাম বাড়ার পাশাপাশি ট্রিপস ছাড় শেষ হলে বাংলাদেশে ইনসুলিনের দাম আটগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে জেনেভাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ সেন্টারের এক সমীক্ষা।

নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা এসব আবেদনের মধ্যে ক্যান্সারের ওষুধ থেকে শুরু করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বায়োসিমিলার ওষুধও রয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বাপি) মহাসচিব এবং ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণ করবে। তবে অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতার কারণে ২০২৫ সালের নভেম্বরের পর থেকে ট্রিপস চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর হবে। এর মানে ওই সময়ের পর নতুন যেসব ওষুধ বাজারে আসবে, সেগুলোর জন্য পেটেন্ট সুরক্ষা ও রয়্যালটি খরচ বহন করতে হবে। আমাদের হাতে সময় খুবই কম। এই ওষুধগুলোর রেজিস্ট্রেশন ভবিষ্যতের জন্য চাওয়া হচ্ছে, এখনই বাজারে আনা হচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “আগামী বৈঠকে ২০২৪ সালে দেওয়া আবেদনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া আমাদের আরও প্রায় ৭০০ নতুন প্রোডাক্ট বিভিন্ন দেশে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে, সেগুলোও প্রস্তুত করে ড্রাগ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দিয়েছি।”

“আমাদের পরামর্শ হলো, আগামী তিন মাসের মধ্যে যদি টেকনিক্যাল কমিটি ও ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি অন্তত আরও একটি বা দুটি বৈঠক করে, তাহলে জুন বা জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত যেসব প্রোডাক্ট এফডিএ অনুমোদন পাবে, সেগুলো বাংলাদেশেও রেজিস্ট্রেশন পেতে পারে।”

“একেকটি ওষুধ ১২, ১৫ বা ১৮ বছরের পেটেন্ট সুরক্ষা পায়। তবে এখন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে রাখলে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও আমরা পেটেন্ট ছাড়া এসব ওষুধ উৎপাদন করতে পারব। পাশাপাশি ১০-১৫ বছর পর আমাদের সক্ষমতাও আরও বাড়বে, তখন আর সমস্যা হবে না,” বলেন ডা. জাকির হোসেন।

Advertisement

ওষুধশিল্প মালিকেরা জানিয়েছেন, বায়োসিমিলার, জেনেরিকসহ ক্যানসার ও অন্যান্য রোগের ওষুধের প্রায় ১,০০০ আবেদন জমা রয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চের পর থেকে ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। সেই কারণেই এতো নতুন আবেদন জমা পড়েছে বলে জানান তারা।

রেনাটা লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “দুই বছর ধরে বৈঠক না হওয়ায় একসাথে এক হাজার আবেদন ঝুলে গেছে। ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির বৈঠকে একটি ওষুধের নাম বলা হয়, সরকার যাচাই-বাছাই করে হ্যাঁ বা না বলে। আমরা ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি—এখন যে আবেদনগুলো রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি অনুমোদন দিক।”

তিনি আরও বলেন, “এই ওষুধগুলো রেজিস্ট্রেশন দিলেই বাজারে চলে আসবে না। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাইছি। পরে আরেকটি বৈঠক ডেকে কোন ওষুধ বাজারজাত করা হবে, তা সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু এখনই, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের আগে রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। এটি না হলে এলডিসি উত্তরণের পর ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে, কারণ তখন শুধু পেটেন্টেড মলিকিউলই আসবে।”

কায়সার কবির বলেন, “এই এক হাজার আবেদনে সবই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রয়েছে, কোনো তুচ্ছ বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নয়। রেনাটা ৪৩টি মলিকিউল বেছে নিয়েছে, যেগুলো সবই ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট। এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ সুযোগ হারালে পেটেন্টধারীদের রয়্যালটি দিতে হবে।”

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বক্তব্য

Advertisement

প্রায় আড়াই বছর পর গত ২৬ তারিখে ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি বৈঠক করেছে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র। তবে ওই বৈঠকে নতুন ওষুধ নিবন্ধনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আরেকটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।

এদিকে, দ্রুত নতুন আবেদন করা ওষুধগুলোর নিবন্ধন দিতে আহ্বান জানিয়েছে ওষুধশিল্প মালিকেরা। তাদের মতে, পেটেন্ট আইনের নিয়ম অনুযায়ী, যেসব ওষুধ বাংলাদেশে নিবন্ধিত থাকবে, সেগুলোর ওপর এলডিসি উত্তরণের পর নতুন করে পেটেন্ট আরোপ করা যাবে না।

Trending

Exit mobile version