ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি এবং রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে ঘোষিত এই কর্মসূচির মধ্যে থাকছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতবিনিময়, মশাল মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি। দাবি আদায় না হলে ১৮ ডিসেম্বর ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক’ আসবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চিকিৎসকরা।
তারা বলেন, বর্তমানে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি এবং রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মাসিক ২৫ হাজার টাকা পারিতোষিক দেওয়া হচ্ছে। অথচ এসব চিকিৎসক তাদের কোর্সের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে নানা সেবা প্রদান করে থাকেন। সকাল ও রাতের ডিউটি মিলিয়ে সপ্তাহে তাদের কর্মঘণ্টা ৬০ থেকে ৭২ ঘণ্টার বেশিও হয়। হিসেবে ঘণ্টাপ্রতি এসব চিকিৎসকদের উপার্জন মাত্র ১০৫ টাকা।
তারা আরও বলেন, সরকারি মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতলে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার জন্য তাদের এসব ডিউটি করতে হয়। কিন্তু এর বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে সামান্য অর্থ। তা ছাড়া বাইরে প্রাকটিস করাও নিয়ম করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর পারিতোষিকের হিসাব তুলে ধরে চিকিৎসকরা বলেন, ভারতে প্রদেশভেদে এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ ৩০ হাজার, পাকিস্তানে প্রায় ৭০ হাজার এবং ভুটানে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পারিতোষিক দেওয়া হয়।
তারা বলেন, বিপরীতে বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। এটিও অর্জনের জন্য নানা আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। অভাব ও দৈন্যতায় যাদের দিন কাটে, মেধার বিকাশ ঘটিয়ে ভালো বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন সেখানে বিলাসিতা।
২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগে কখনোই লক্ষ টাকার ডাক্তার তৈরি সম্ভব নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, ভালো বিশেষজ্ঞ তৈরিতে ভালো বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ না করলে ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হবে কীভাবে? এর ফলে ২০২৪ সালে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যয় হয়েছে ৫০০ মিলয়ন ডলার। ২৫ লক্ষ রোগী প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভালো সেবা নিতে ভারত চলে যায়।
চিকিৎসকরা বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এতো বড় বাজেটের ২ শতাংশও কি ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে বিনিয়োগ করা যায় না?
এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম পোস্ট গ্রাজুয়েট বেসরকারি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন বলে জানান তারা। বলেন, অতিদ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা সময়ের দাবি। কিন্তু এ নিয়ে গত চার মাস ধরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান সহকারীদের সঙ্গে দেখা করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ফাইলটি আটকে আছে এক মাস হলো। সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্নয়ক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যদের সাথে সভা করে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় দাবি আদায়ে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এসব চিকিৎসক। জানান, কর্মসূচির প্রথম দুই দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার (১১ ও ১২ ডিসেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা, ১৩ ডিসেম্বর শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্যে মশাল মিছিল, ১৭ ডিসেম্বর সকল মেডিকেল কলেজে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এতেও দাবি আদায় না হলে ১৮ ডিসেম্বর ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক’ দিবেন তারা।