দক্ষিণাঞ্চলের একুশ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি খুলনায় ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে খুলনায় ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত চার বছর শুধু ফাইল চালাচালিতেই কেটে গেছে, যা নিয়ে ক্ষুদ্ধ খুলনার সচেতন মহল ও নাগরিক নেতারা।
ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের অন্য বিভাগে গিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। অপরদিকে ৭টি বিভাগের টার্সিয়ারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেন্টাল ইউনিট থাকলেও শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেন্টাল ইউনিট রাখা হয়নি। ফলশ্রুতিতে ডেন্টারের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীও নেই। এতে করে মুখ ও দাঁতের জটিল রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। এই এলাকার মানুষের মুখ ও দাঁতের জটিল রোগীদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা রাজধানী বা অন্য জেলায় গিয়ে চিকিৎসা নিলেও অধিকাংশ মানুষ মুখ ও দাঁতের জটিলের জটিল চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা ক্লাস শুরু করার অনুমোতি দেওয়ার দাবী জানাচ্ছেন সচেতন মহল ও নাগরিক নেতারা।
এ প্রসঙ্গে খুলনায় ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল এর অধ্যক্ষ ডা. অনুপম পোদ্দার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের দাবী দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি চালু করা। দীর্ঘ দিনেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় সচেতন মহল।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোতি দিলে আমরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি। এধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আগামী শিক্ষা বর্ষে ভর্তি এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি দ্রুত করতে পারবো।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার খুলনা ডেন্টাল কলেজের প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেন। একই সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকার অনুমোদন দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফাইল চালাচালিতেই রয়ে গেছে। কবে শুরু হবে সেবিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
নাম প্রকাশে একটি সুত্র জানায়, বিগত সরকারের সময় অবকাঠামো উন্নয়নের অযুহাতে খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল কার্যক্রম শুরু করতে পারেন নাই। তাদের মূল: উদ্দেশ্য ছিল অবকাঠামোগত উন্নয়ন। মন্ত্রনালয়ের একটি গ্রুপ মূলত: অবকাঠামো উন্নয়নের পর ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল। এতে তাদের আর্থিক ফাইদার বিষয়টি জড়িত ছিল। যার ফলে প্রাথমিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম অনুমোতির দিতে চাইনি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশের প্রায় সকল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন করেছে। শুধুমাত্র খুলনায় ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল এর ব্যতিক্রম। এটা দক্ষিণাঞ্চলের একুশ জেলার মানুষের সাথে বড় ধরনের বৈষম্যও বটে। এখন দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোতির পক্ষে সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির দাবীও সংশ্লিষ্টদের।
উল্লেখ্য, কলেজে মোট ১২০টি আসন এবং হাসপাতালে ৫০০ শয্যা চালু করার জন্য তারা প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। একাডেমিক ভবনে মোট ২৮টি বিভাগ থাকবে। প্রশাসনিক ভবন হবে ৮ তলা। প্রাকটিক্যাল কক্ষ, বিভিন্ন ধরনের ল্যাব, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও ৪০০ আসনের একটি লাইব্রেরি নির্মাণ করা হবে। থাকবে অডিটোরিয়াম, লেকচার গ্যালারি, শ্রেণিকক্ষ, টিউটোরিয়াল কক্ষ, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক কমন রুম, ক্যাফেটেরয়া প্রভৃতি। কলেজে মর্গ ও মরচুয়ারি এবং ডিএনএ টেস্টের আধুনিক ল্যাব থাকবে। হাসপাতালে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগ, আউটটোর, ফার্মেসি প্রভৃতি থাকবে। নির্মাণ করা হবে হাসপাতাল ভবন, প্রশাসনিক ভবন। বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, হেলিপ্যাড, মসজিদ, পুকুর, মাঠ ও জিমনেসিয়াম তৈরি করা হবে।
২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার খুলনা ডেন্টাল কলেজের প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেন। একই সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকার অনুমোদন দেন। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রনালয় থেকে মহাপরিচালক বরাবর কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়া খুলনা ডেন্টাল কলেজের জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাস সংস্থাপনের নিমিত্তে স্থান নির্বাচন, কলেজের অধ্যক্ষ ও জনবল নিয়োগ ও আর্থিক সংশিষ্ট বিষয়াদি ও বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। একই সালের ১২ মার্চ ডাঃ অসীম কুমার সাহা কে খুলনা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সরকারী মঞ্জুরী প্রদান করা হয়। পহেলা এপ্রিল খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। ২৯ নভেম্বর ডাঃ মোশারফ হোসেন খন্দকারকে খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ করা হয়। এরপরে ২০২২ সালের খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের জন্য জমির তফসিলের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সালের ২৬ ডিসেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক থেকে মন্ত্রনালয়ে খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মান শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে আনা দাগ সূচি ও স্কেচম্যাপ ও সম্ভাব্য প্রাক্কলন করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর ডাঃ অনুপম পোদ্দারকে খুলনা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয় এবং খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রেরন করা হয়। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল শীর্ষক প্রকল্পের যাচাই বাছাই কমিটির সভা আহবান করা হয়। ৩ মার্চ খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল শীর্ষক প্রকল্পের যাচাই বাছাই কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মন্ত্রনালয় থেকে মহাপরিচালক (ডিজিএমই) বরাবর খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি পর্যবেক্ষণ প্রতিপালন পূর্বক সংশোধিত ডিপিপি প্রেরণ করা হয় এবং তা এখন মহা পরিচালক (ডিজিএমই) থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রেরনের অপেক্ষায় আছে।