মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ চান অনিয়মিত ও মানোন্নয়নের শিক্ষার্থীরা

মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বরাবর স্বারকলিপি দিয়ে এই দাবি জানিয়েছেন তারা।

এর আগে গত ২৯ আগস্টও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন তারা। একইদিন বিএমডিসির প্রেসিডেন্ট জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান এবং ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে এসব শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এইচএসসির পর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে গ্যাপ নিয়ে কোনো নিয়ম নেই। বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), প্রকৌশলের গুচ্ছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জিএসটি গুচ্ছ, বিইউপি, কৃষি গুচ্ছসহ দেশের যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের গ্যাপ নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যায়।’

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা আরও লিখেছেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর ইয়ার গ্যাপের অনেক কারণ থাকতে পারে। গুরুতর অসুস্থতা, বড় কোনো অস্ত্রোপচার, মা-বাবা বা পরিবারের কোনো সদস্য মারা যাওয়া বা অন্য যেকোনো কারণে কেউ উচ্চ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। এরা যোগ্যতার অন্যান্য শর্ত পূরণ করছে। চিকিৎসকতা একটি মহৎ পেশা এবং দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজসহ বিদেশে পড়তে হলে দেশের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। কিন্তু যারা কোনো দৈব দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এক বছরের জন্য অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে, তারা এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না।’

তারা লিখেছেন, ‘এক বছর অতিরিক্ত বিরতি থাকা কখনই কোনও শিক্ষার্থীর অযোগ্যতা হতে পারে না। নিয়মিত ও অনিয়মিতদের মধ্যে এই বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিকট আমরা নিম্নলিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করছি-

১. পরবর্তী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার ন্যায্য অধিকার আদায়ের সুযোগ প্রদান করুন।
২. ২০২১ সাল পর্যন্ত অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন যেভাবে ফার্স্ট টাইমার হিসেবে গন্য করে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হতো, এইচএসসি ২৩ ব্যাচও যেন সেই সুযোগ পাই তা নিশ্চিত করা ’

স্মারকলিপির বিষয়ে টাঙ্গাইলের ইব্রাহিম খাঁ কলেজের শিক্ষার্থী রাফিয়া সুলতানা মেডিভয়েসকে বলেন, ‘গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আগে যেভাবে ভর্তি নেওয়া হতো, আমাদের সে যৌক্তিক দাবিটি তারা বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অসুস্থ থাকায় গতকাল আমরা তাঁর সাক্ষাৎ পাইনি। আগামী রোববার আমরা পুনরায় তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য যাব।’

প্রসঙ্গত, আগে মেডিকেলেও অনিয়মিত ও মানোন্নয়নের পরীক্ষাথীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নতুন নীতিমালায় তা বন্ধ করা হয়। বিএমডিসির মেডিকেল ভর্তি নীতিমালা ২০২৩-২৪ অনুযায়ী, এসএসসি ও এইচএসসির মাঝে দুই বছরের বেশি বিরতি থাকলে (অনিয়মিত) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। আর প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর পেতে হবে। আর্মড ফোর্সেস এবং আর্মি মেডিকেল কলেজেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মাঝে দুই বছরের বেশি বিরতি থাকা যাবে না। আবার কেউ যদি বিদেশে মেডিকেলে পড়তে চায় তাহলেও তাকে দেশের ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে ৪০ নম্বর পেতে হবে। ফলে কোনো শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দুই বছরের বেশি ব্যবধান হলে চিকিৎসক হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।

অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্মারকলিপিতে সই করেছেন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান শাহরিয়ার নাঈম গাজীপুরের মিছির আলী খান মেমোরিয়াল কলেজের মাইমুনা আক্তার হিরা এবং টাঙ্গাইলের ইব্রাহিম খাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাফিয়া সুলতানা প্রমুখ।

Exit mobile version