স্বাস্থ্য সংবাদ

গুপ্তঘাতক থ্যালাসেমিয়া: বাহকের সঙ্গে বাহকের বিয়ে বন্ধেই প্রতিরোধ

Published

on

বুধবার (৮ মে), বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। ‘অগ্রগতিকে সঙ্গী করে জীবনের ক্ষমতায়ন: সকলের জন্য সমান ও সহজলভ্য থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা’—প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি।

থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতায় দিবসটি নানা আয়োজনে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজনের থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে, আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৬ হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

থ্যালাসেমিয়া হলো একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা যেহেতু তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়।

গবেষকদের তথ্য মতে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত জার্নালগুলোতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার প্রায় ১২-১৩% থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক রয়েছে। এর মধ্যে বিটা থ্যালাসেমিয়া ২.৫% এর মতো। বাকিটা হচ্ছে ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া।

Advertisement

এই হিসাব অনুযায়ী, দুই কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। এই বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ থেকে ১০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে।

প্রকাশিত জার্নালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের কমপক্ষে ১ লাখ থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছেন। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।

গবেষণা তথ্য মতে, বিশ্বের সকল অঞ্চলে থ্যালাসেমিয়া নেই। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে থ্যালাসেমিয়া প্রাদুর্ভাব বেশি। এই উপমহাদেশে কীভাবে থ্যালাসেমিয়া আসলো, এটা অনেক ধারণা-অনুমান রয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব। এ লক্ষ্যে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ, যা বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে তা জিনগত কারণে সন্তানদের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে পারে। এজন্য পুরুষ বা নারী যে কেউ এ রোগের বাহক কি-না তা বিবাহপূর্ব পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা জরুরি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতা জনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিনবাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েরা তাদের বিবাহের পূর্বে এই রোগের জিনবাহক কিনা তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বাণীতে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া এবং বাহকে-বাহকে বিয়ে প্রতিরোধের জন্য দেশের বাড়িতে বাড়িতে, মহল্লায় মহল্লায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি সকল পেশাজীবী ব্যক্তি ও সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম, অভিভাবকসহ সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Trending

Exit mobile version