জাতিসংঘের একটি নতুন প্রতিবেদন সামনে এসেছে যা বেশ চমকপ্রদ ও মারাত্মক তথ্য। প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে। ঠিক একই সময়ে প্রতিদিন ১ বিলিয়নেরও বেশি খাবার নষ্ট হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে গোটা বিশ্বে ১.০৫ বিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য নষ্ট হয়েছে।
যার অর্থ মানুষের জন্য উপলব্ধ খাবারের প্রায় এক পঞ্চমাংশ গৃহস্থালি, রেস্তোরাঁ, খাদ্য পরিষেবার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি থেকে নষ্ট হয়েছে । অর্থাৎ ক্ষেত থেকে মুখে তোলার আগে পর্যন্ত ১৩% খাবার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোট প্রায় এক তৃতীয়াংশ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময় নষ্ট হয়ে যায়।এই পরিসংখ্যানগুলি বিশেষভাবে লক্ষণীয় কারণ বিপরীতে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন এবং ৭৮৩ মিলিয়ন ক্ষুধার তাড়নায় ভুগছে।
সম্প্রতি ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স – এর ২০২৪ এর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এই বিস্ময়কর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। ইউএনইপি পরিচালক ইঙ্গার অ্যান্ডারসনের মতে, উৎপাদিত খাদ্য বিতরণের সময় বিশ্বের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের চালক হিসাবে বর্জ্য খাদ্যের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন – ‘খাদ্য অপচয় একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি।
সারা বিশ্বে খাদ্য নষ্ট হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ ক্ষুধার্ত। শুধুমাত্র এটি একটি বড় সমস্যা নয়, এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্যের প্রভাব জলবায়ু এবং প্রকৃতির জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল সমস্যা।”
প্রতিবেদনে, সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রথম দিকে ফেলে দেওয়া খাদ্য উদাহরণস্বরূপ শাকসবজি যা ক্ষেতে পচে যায় এবং রেফ্রিজারেটেড অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায় এমন মাংস এবং খাদ্য ‘বর্জ্য’ যা পরিবার, রেস্তোরাঁ এবং দোকান থেকে ফেলে দেয়া হয়- দুটির মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০২২ সালে পরিবারগুলি থেকে ৬৩১ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য নষ্ট হয়েছে- মোটের ৬০% – যেখানে খাদ্য পরিষেবা খাত ২৮ % এবং রিটেল খাত ১২% বর্জ্যের জন্য দায়ী।
রিপোর্টে পাওয়া গেছে, গড় ব্যক্তি প্রতি বছর ৭৯ কিলোগ্রাম খাবার অপচয় করে, যার অর্থ প্রতিদিন পরিবারে অন্তত এক বিলিয়ন খাবার নষ্ট হয়। জাতিসংঘের রিপোর্ট মোতাবেক, মাত্র ২১টি দেশ তাদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় খাদ্যের ক্ষতি এবং বর্জ্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা বলেছে যে, এই বর্জ্য বৈশ্বিক তাপ নির্গমনের ৮% থেকে ১০% উৎপন্ন করে- বিমান চালনা খাত থেকে নির্গমনের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে খাদ্য বর্জ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলির প্রভাব এতদিন উপেক্ষা করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে জমি এবং পানির প্রয়োজন, এবং খাদ্য ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী গ্রহ-তাপীকরণ নির্গমনের প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী।
খাদ্যের বর্জ্যের সিংহভাগই জমিতে যায়, যা ভেঙ্গে মিথেন গ্যাস তৈরি হয় । এটি একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, মিথেনের উষ্ণতা শক্তি কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে প্রায় ৮০ গুণ বেশি। খাদ্যের বর্জ্য শুধু জলবায়ু পরিবর্তনকেই প্রভাবিত করে না বরং এটি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। গরম দেশগুলিকে শীতল দেশগুলির চেয়ে বেশি খাবার নষ্ট করতে দেখা গেছে, কারণ উচ্চ তাপমাত্রা খাবার নষ্ট হওয়ার আগে সংরক্ষণ করা এবং পরিবহন করা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, উচ্চ এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে প্রতি বছর জনপ্রতি ৭ কিলোগ্রাম খাবারের অপচয় হয়।
সূত্র : সিএনএন