নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে; মারধরের শিকার হয়েছেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের অনুগতরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অধ্যাপক শারফুদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সরব হন একদল চিকিৎসক-কর্মচারী। ফলে উত্তেজনা চলতে থাকে দেশের চিকিৎসা শিক্ষার সর্বোচ্চ এই প্রতিষ্ঠানে।
বিদায়ী ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে শনিবার তার দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয় সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎসকরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সেখানেই মারধরের শিকার হন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রাসেল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডা. শিপনকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকেও ডা. রসুল আমিন শিপনকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, “এটাই তো হওয়ার কথা ছিল, এটাই স্বাভাবিক। এতদিনের ক্ষোভ আউটব্রার্স্ট হবেই, সেটাই হয়েছে। ওরা এত জুনিয়র, অথচ সিনিয়রদের পদে পদে অসম্মান করেছে, সেটা তো ফেরত আসবেই।
“যদিও এখনও যা হচ্ছে, সেটাও ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কিছু করার নেই।”
এবিষয়ে ডা. শিপন ও ডা. রাসেলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, তারা অধ্যাপক শারফুদ্দিনের ছায়ায় থেকে পুরো বিএসএমএমইউ নিয়ন্ত্রণ করতেন।
বর্তমান উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শুনেছি তারা (বিক্ষোভকারীরা) কয়েকজনকে মারধর করেছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব।”
অধ্যাপক শারফুদ্দিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৮ মার্চ। পরদিন দায়িত্ব নেবেন দীন মো. নুরুল হক। তার ছয় দিন আগেই এই ঘটনা ঘটল।
দুপুর ১২টার দিক থেকে ভিসি ভবনে ভিসির কক্ষের বিক্ষোভকারীরা অংশ নেন। তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান উপাচার্যের সময়ে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।
বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাচিপ শাখার সদস্য সচিব ও হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো।
তিনি বলেন, “বেশ কিছুদিন হলো নতুন উপাচার্য হিসেবে দীন মোহাম্মদ নূরুল হক স্যারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকেই একটা রব ছিল, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে ভিসি আসবে? কিন্তু আমাদের কথা ছিল নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যাকে দেবেন, আমরা তাকেই মেনে নেব, সেটাই চূড়ান্ত হবে।
“নেত্রীর কথা তো আমরা অমান্য করতে পারি না। আমরা যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, কেন্দ্রীয় ও বিএসএমএমইউয়ের স্বাচিপের নেতৃত্বে রয়েছি, তাদের কথা তো এটাই হবে, এটাই হওয়ার কথা।”
মেয়াদের শেষ সময়ে এসে অধ্যাপক শারফুদ্দিন তার অনুগতদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন ডা. জোয়ারদার।
তিনি বলেন, “নতুন ভিসির নাম ঘোষণা হওয়ার পর বর্তমান ভিসি তার সময়ে আর সিন্ডিকেট মিটিং করতে পারবেন না, কেবল রুটিন কাজ করবেন। এটা অলিখিত নিয়ম।
“অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যখন শারফুদ্দিন স্যারের নাম ঘোষণা হলো, তখন কিন্তু তিনি নিজেই তাকে (কনক কান্তি বড়ুয়া) রুটিন কাজের বাইরে কিছু করতে দেননি। এখন কিন্তু তিনি শতাধিক চিকিৎসক, কর্মচারী ও প্রায় ৩০ জনের মতো প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছেন।”
এর পেছনে বাণিজ্যই প্রধান দাবি করে ডা. জোয়ারদার বলেন, “কারণ হচ্ছে, যাদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে কী বলা হবে, টাকা ফেরত দেওয়া হবে কি না? এগুলোই এখন চাউর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
এই নিয়োগ বাণিজ্য আটকাতেই স্বাচিপ কর্মসূচি পালন করে বলে ডা. জোয়ারদারের দাবি।
“কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে এসে আমরা ছোট হয়েছি, বাইরে মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের দাবি, এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক, ভিসির মেয়াদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।”
ডা. রাসেল ও ডা. শিপনকে মারধর নিয়ে ডা. জোয়ারদার বলেন, “ভিসি স্যার যাদেরকে নিয়ে এতদিন চলাফেরা করেছেন, সেই ডা. রাসেল আর ডা. শিপন আমাদের কত জুনিয়র, অথচ তারা চেয়ারে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের অপমান করেছেন।
“মেইনলি, ওরা কারও টার্গেট ছিল না, কিন্তু এসব কিছুর তো কিছুটা ফিরে আসবেই।”
নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সবকিছুই নিয়মমাফিক হয়েছে।”