স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা ১০ দফা নির্দেশনা পালন নিশ্চিত করতে সারা দেশে শতাধিক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক এবং হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ঢাকায় দেড় মাসের ব্যবধানে খতনা করাতে গিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই শিশুর মৃত্যু এবং এনডোস্কপি করাতে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক একজনের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মোট ১০টি নির্দেশনা ও শর্তের কথা জানায়।
নির্দেশনায় বলা হয়, নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেটিস্ট ছাড়া কোনো অস্ত্রোপচার করা যাবে না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতালের সেবা দেওয়া যাবে না।
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে আবশ্যিকভাবে এসব শর্ত মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব নির্দেশনা পালন নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মোমিনুল আহসান জানান, অভিযানে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। অনিয়মের কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি জানান, বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকায় ছয়টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ১২টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রামে কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে অনিয়মের দেখা পান।
মেট্রোপলিটন হাসপাতালে দেখা যায়, ল্যাব সহকারীরা রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ল্যাব টেকনিশিয়ানরা রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবেন। এই হাসপাতালে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হয়নি।
সেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, ল্যাব টেকনিশিয়ানদের সনদ ছিল না।
সিভিল সার্জন বলেন, পরিদর্শনে গিয়ে আমরা কিছু হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম পেয়েছি। তাদেরকে সতর্ক করে অবিলম্বে সেগুলো ঠিক করতে বলেছি। নগরীর বাইরে উপজেলা পর্যায়েও বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করা হবে।
পাবনায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি দল এবং সিভিল সার্জন মো. শহীদুল্লাহ দেওয়ানের নেতৃত্বে আরেকটি দল বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায়। তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছেন।
অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া হাসপাতালগুলোকে জরিমানা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক, মো. মাহমুদ হাসান রনি বলেন, তারা সুজানগর কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ও ওষুধ মজুদ খুঁজে পেয়েছেন। এখানে শিক্ষানবিশদের দিয়ে ইসিজি করানো হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তারা সাঁথিয়া উপজেলার সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম দেখতে পান। মালিক ডা. পাভেল রানাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
একই উপজেলায় সততা ডেন্টাল কেয়ারে অভিযানে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদেরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে চেম্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এছাড়াও রাজশাহীতে নর্থবেঙ্গল, রেনেসাঁ ও লাইফগার্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের অভিযোগে প্রত্যেকটিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বসুন্ধরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ফাঁকা প্যাথলজিক্যাল টেস্ট রিপোর্টে চিকিৎসকের স্বাক্ষর পাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্লাড ব্যাংকে রক্ত সংরক্ষণ করার ফ্রিজে ফুল পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট পাওয়া যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।