বিএসএমএমইউয়ে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম

বিএসএমএমইউ প্রথমবারের মতো টেস্টটিউব নবজাতকের জন্মের পর নবজাতক কোলে চিকিৎসকরা | ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়েছে। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি দেশের চিকিৎসার সেবার ইতিহাসে নতুন একটি মাইলফলক। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সি-ব্লকে মা ও প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

বরিশালের বাসিন্দা নিঃসন্তান দম্পতি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভুগছিলেন। ৮ বছর আগে দম্পতির রোগটি ডায়াগোনোসিস হয়। এ দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিরসনে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও কোনো সফলতা বা তারা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এর সুপরামর্শও পাননি।

অতঃপর ২০২২ সালে এই দম্পতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফার্টিলিটি বিভাগে চিকিৎসা শুরু করেন এবং পরিপূর্ণ ইভাউলিউশন (Evaluation) শেষে এই বিভাগ তাকে আইভিএফ উইথ আইসিএসআই (ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন, যা আইসিএসআই নামে পরিচিত, ডিমের সাইটোপ্লাজমে শুক্রাণু কোষকে ইনজেকশন দেওয়ার একটি কৌশল। এই কৌশল আইভিএফের একটি বিশেষ রূপ যা পুরুষ-ফ্যাক্টর বন্ধ্যাত্বের গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়) এর পরামর্শ প্রদান করে এবং স্টেম সেল থেরাপির গ্রহণের মাধ্যমে তারা এ চিকিৎসা শুরু করেন। যথাযথ চিকিৎসা শেষে গত ফেব্রুয়ারি এই নবজাতকের মা গর্ভধারণ করেন এবং নিয়মিত চেকআপে থাকেন। ৩৮ সপ্তাহের পর সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সফলতার নিদর্শনস্বরূপ সকাল সাড়ে ৯টায় এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।

বিএসএমএমইউয়ে প্রথম টেস্টটিউব নবজাতকের সিজারিয়ান সেকশনের সময় অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের শিক্ষক নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেব্রবত বনিক, ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, নিউন্যাটোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা দীবা, সহযোগী অধ্যাপক (অনারারি) ডা. শাহীন আরাসহ ১৭ জন চিকিৎসক ও পাঁচজন নার্স অংশ নেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের প্রধান জানান, সাধারণত বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় শতকরা ৫-১০ শতাংশ রোগীদের আইভিএফ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফার্টিলিটি বিভাগ চালু হয়। তবে ২০১৯ সাল থেকে অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর তত্ত্বাবধানে টেস্টটিউব বেবির আইভিএফ পদ্ধতি পুরোদমে চালু হয়। করোনাকালীন এই সেবা কিছুটা স্থগিত থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্বগ্রহণের পরপর ২০২২ সালে পুনরায় আইভিএফ পদ্ধতি চালুর জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর নেতৃত্বে বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা স্টেম সেল থেরাপি, পিআরপি থেরাপি, রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি, এআরটি, আইইউআই, আইভিএফ সেবা প্রদান করে আসছে।

Exit mobile version