বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাণ্ডারি শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, শিশুরা এদেশের ভবিষ্যৎ, তারাই দেশকে পরিচালিত করবে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিমসম) অডিটোরিয়ামে ‘জাতীয় ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন ২০২৩’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
শিশুদের খাদ্য-পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব হলে অনেক সমস্যা দেখা দেয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই শিশুরা ভালোভাবে বেড়ে উঠুক, দেশের সুনাগরিক হোক। সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সোনার মানুষ দরকার, সোনার শিশু দরকার।
শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, সোমবার দিনব্যাপী শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চলবে। আমাদের ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ২৫ লাখ, ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ১ কোটি ৯৫ লাখ শিশু আছে। সর্বমোট ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াবো।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭৪ সাল থেকে দেশে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর আয়োজন শুরু হয়। তখন দেশে রাতকানা রোগীর সংখ্যা ছিল চার শতাংশের বেশি। তখন অনেক ছেলে-মেয়েদের রাতকানা রোগী হিসেবে দেখা যেত। অনেক শিশু পোলিওতে আক্রান্ত হতো। ভিটামিন এ ক্যাপসুলের জন্য রাতকানা রোগ নেই বললেই চলে।
রাতকানা রোগ হলে দৈহিক এবং মানসিকভাবে শিশু বেড়ে উঠতে পারে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এসময় শিশুদের লেখাপড়ায় মনোযোগ কম হয়। ভিটামিনের অভাবে মৃত্যুর হার বেড়ে যায় ৩৬ শতাংশ। পুষ্টির অভাবে শিশুরা খর্বাকৃতির হয়।
দেশে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির ছিল, সেটা এখন অনেক কমে গেছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ভিটামিনের অভাবে শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- হাম, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া। শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল নিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। মহাখালীর জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মহাখালী জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম ।
দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনে ৬-৫৯ মাস বয়সের ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ক্যাম্পেইনের আওতায় ৬-১১ মাস বয়সের ১৫ লাখ শিশু এবং ১২-৫৯ মাস বয়সের ১ কোটি ৯৫ লাখ শিশুকে ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে অবহতিকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় ওয়ার্ড পর্যায়ে এবং উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে লজিস্টিকস পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে জেলা, সিটি করপোরেশন ও মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল।