এক দশকে প্রথমবারের মতো দেশের ওষুধের বাজারের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক

কভিডকালীন সময়ে দেশের ওষুধের বাজারে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ওষুধের খুচরা বিক্রির অর্থমূল্য ছিল ২৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। কিন্তু কভিড পরবর্তী অর্থবছর ২০২১-২২-এ গত এক দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওষুধের বাজার প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে বাংলাদেশে ওষুধের খুচরা বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায়। মোট ওষুধ বিক্রির ৭০ শতাংশের বেশি করেছে শীর্ষ ১০ কোম্পানি। তবে এর মধ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শুধু স্কয়ার ও রেডিয়েন্টের। বাকি সব কোম্পানিরই বিক্রয় প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। দেশে ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির ওষুধ বিক্রি ও ধরন নিয়ে জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএ। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে ওষুধ বাজারের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ওষুধ খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত এক দশকে কম হোক বা বেশি দেশের বাজারে ওষুধের খুচরা বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ছিল ইতিবাচক। এ সময়ের মধ্যে গত অর্থবছরই প্রথমবারের মতো বিক্রি কমেছে বা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাদের দাবি কভিডকালে ওষুধ বিক্রি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এরপর স্বাভাবিক ধারায় ফিরলেও অস্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তা কমেছে। কভিডের টিকা কার্যক্রমে ওষুধ সেবনে মানুষের অভ্যাস ও চর্চা কমে যাওয়া অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিক্রীত ওষুধের অর্থমূল্য বিবেচনায় শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে প্রথমেই আছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। ওষুধের মোট খুচরা বিক্রির ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশই স্কয়ারের। ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে স্কয়ারের ওষুধ বিক্রি হয় ৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার।

শীর্ষ দশে স্কয়ার ও রেডিয়েন্ট ছাড়া সব কোম্পানির বিক্রয় প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক

২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের বিক্রীত ওষুধের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে শীর্ষ দশে ইনসেপ্টার অবস্থান দ্বিতীয়। ওষুধের মোট বিক্রিতে এ কোম্পানির অংশ ছিল ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ ওষুধ বিক্রি করেছে বেক্সিমকো। ওষুধের মোট খুচরা বিক্রিতে বেক্সিমকোর হিস্যা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে বেক্সিমকোর বিক্রীত ওষুধের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে ওষুধ বিক্রিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল হেলথকেয়ার ফার্মা। ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে হেলথকেয়ারের বিক্রীত ওষুধের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। ওষুধের মোট বিক্রিতে এ কোম্পানির অংশ ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

ওষুধ বিক্রিতে গত অর্থবছরে পঞ্চম অবস্থানে ছিল রেনাটা। এ কোম্পানিটির ওষুধের খুচরা বিক্রি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা অপসোনিন ফার্মার ওষুধ বিক্রি গত অর্থবছরে কমেছে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিক্রির অর্থমূল্য ছিল ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। সপ্তম অবস্থানের এসকায়েফের বিক্রি গত অর্থবছরে কমেছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। কোম্পানিটির ওষুধ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার। অষ্টম অবস্থানের অ্যারিস্টোফার্মার ওষুধের খুচরা বিক্রি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকার।

তালিকার নবম ও দশম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে একমি ও রেডিয়েন্ট ফার্মা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে একমির ওষুধ বিক্রি হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকার। স্কয়ারের পর দশম অবস্থানে থাকা রেডিয়েন্ট ফার্মা শীর্ষ দশের দ্বিতীয় কোম্পানি, যাদের ওষুধের বিক্রি গত অর্থবছরে বেড়েছে। ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়ে গত অর্থবছরে রেডিয়েন্টের ওষুধের খুচরা বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৫১ কোটি টাকা।

ওষুধ কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা যা বলছেন
ওষুধের বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, গত এক দশকে ওষুধের বিক্রি প্রতি বছর ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে। ১০ বছরের মধ্যে গত অর্থবছরই প্রথমবারের মতো ওষুধের খুচরা বিক্রির বাজারে পতন হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকার পর হঠাৎ করে গত এক বছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো কভিডকালের অস্বাভাবিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধি। কভিডকালে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বিশেষ করে ওষুধ বিক্রিতে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধির পর পরবর্তী বছরে স্বাভাবিক ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু সেটা কভিডকালের অস্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই মোট খুচরা বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যে দুটি কোম্পানি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা, বিপণন এবং রোগীর আস্থার কারণে। এ বিষয়গুলোর কারণে শীর্ষ অন্য কোম্পানিগুলোর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও দুটি কোম্পানির বিক্রয় ইতিবাচক।

রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘আগের বছর অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ছিল। যার কারণ ছিল অনেক কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছিল। এতে করে অর্থমূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃত্রিম হলেও প্রবৃদ্ধি হয় উচ্চহারে। ওষুধের পরিমাণে প্রবৃদ্ধির কারণে ওই প্রবৃদ্ধি হয়নি। পরের বছরে শিল্পের গড় প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। এর মধ্যে রেডিয়েন্টের প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণ হতে পারে আমরা দাম বাড়াইনি। ফলে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ধারাবাহিক হারে। কভিড ওষুধের বাজারে প্রভাব ফেলেছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব নয়।’

ওষুধের বিক্রেতা শীর্ষ কোম্পানিগুলোর বিপণন ও অর্থসংশ্লিষ্ট কর্তারা জানিয়েছেন, ওষুধ বিক্রিতে পতন গত ১০ বছরে হয়নি। কভিডকালে ওষুধের বিক্রির অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, কিন্তু সেটা বড়জোর একটা প্রান্তিকের জন্য। ওই প্রান্তিকে অনেক মানুষ লকডাউন আতঙ্কে চার-পাঁচ মাসের ওষুধ মজুদ করে। ওই প্রান্তিকে বিক্রয় প্রবৃদ্ধি হয় অনেক বেশি। গোটা বছরে ওই প্রান্তিকের প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি কভিডের টিকা কার্যক্রমের পর স্বাভাবিক অনেক রোগ বিশেষ করে মৌসুমি ঠাণ্ডা কাশির মতো সমস্যাগুলো কমে যায়। সে সময় অ্যাকিউট মেডিসিন যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারও কমে যায়। কভিডের পর মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে। যখন তখন যেকোনো ওষুধ সেবন থেকে মানুষ বিরত ছিল। আরেকটা কারণ হলো আর্থিক। এ-সংক্রান্ত সক্ষমতায় প্রভাব পড়ায় মানুষ ছোটখাটো সমস্যা হলেই ওষুধ সেবন করার চর্চা থেকেও বিরত ছিল। অর্থাৎ নিতান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষ ওষুধ কেনেনি। সব মিলিয়েই ওষুধের বিক্রি কমেছে।

ওষুধের বাজারে নতুন কোম্পানি ডিবিএল ফার্মার বিজনেস অপারেশনসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ কামরুল আলম বলেন, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে। সুতরাং অতি জরুরি চিকিৎসা ছাড়া সাধারণ চিকিৎসায় সক্ষমতার প্রেক্ষাপটে ভুগতে হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামালের দাম বেড়েছে, যা কোম্পানির সার্বিক মুনাফায় প্রভাব ফেলেছে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা সঠিক যে গত এক দশকে প্রথমবারের মতো ওষুধের খুচরা বিক্রিতে পতন হয়েছে। এর কারণ ছিল মূলত সাধারণ মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমে যাওয়া। এছাড়া কভিডকালে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর বাজার আবার স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে অস্বাভাবিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধির পর প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে।

জাহাঙ্গীর আলম আরো জানান, আইকিউভিআইএ মূলত খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে। হাসপাতাল পর্যায়ে ব্যবসার তথ্য আইকিউভিআইএর পরিসংখ্যান জরিপে আসে না। বাংলাদেশে ওষুধের ব্যবসার ১০-১৫ শতাংশ হয় হাসপাতালে। বাকি ৮০-৮৫ শতাংশ হয় খুচরা পর্যায়ে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদনের সঙ্গে আইকিউভিআইএর তথ্যের তারতম্য থাকে। এর কারণ বার্ষিক প্রতিবেদনে যে ব্যবসা দেখানো হয়, সেখানে রফতানির তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোরও অনেক ব্যবসা থাকে। যেমন কাঁচামাল বা এপিআইয়ের ব্যবসা থাকতে পারে, হারবাল ওষুধ কিংবা পশু স্বাস্থ্য পণ্য। এসব তথ্য বা পরিসংখ্যান আইকিউভিআইএর তথ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। সব মিলিয়েই তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনের সঙ্গে ওষুধের খুচরা বিক্রয়সংক্রান্ত আইকিউভিআইএর তথ্যে তারতম্য থাকে।

সর্বোচ্চ ওষুধ বিক্রির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে আছে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানি। স্কয়ার ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলো হলো বেক্সিমকো, রেনাটা ও একমি। এ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বেক্সিমকোর নিট আয় ছিল ৩ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। একইভাবে ওষুধের ব্যবসা থেকে রেনাটা ও একমির আয়ও বেড়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওষুধ বিক্রি প্রবৃদ্ধি কমলেও খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ সেবনের চর্চা ও অভ্যাসগত কারণে বিক্রীত ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর বা অ্যাসিডিটির ওষুধ। মোট বিক্রীত ওষুধের ১৩ শতাংশের বেশি অ্যাসিডিটির। অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে এ হার ৬ শতাংশের বেশি। অ্যাসিডিটি, অ্যান্টিবায়োটিকের পরই দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ডায়াবেটিসের ওষুধ। ইনজেকশনের আকারে ব্যবহূত এ ওষুধের হিস্যা মোট বাজারের সাড়ে ৩ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মোট বিক্রীত ওষুধের প্রায় ২৩ শতাংশই দখল করে আছে অ্যাসিডিটি, অ্যান্টিবায়োটিক ও ডায়াবেটিস।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ফাস্টফুড ও ভেজাল খাবার মানুষের মধ্যে অ্যাসিডিটি সমস্যা বাড়াচ্ছে। অ্যাসিডিটির ওষুধ বিক্রিও তাই সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধটি কিনতে পারাও এর বিক্রি বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ। এদিকে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ব্যবহূত হওয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি বেশি হওয়ার কারণ মূলত ক্রেতার অসচেতনতা। আর এক্ষেত্রে বিক্রেতাদেরও রয়েছে অতিমুনাফার প্রবণতা।

ওষুধের প্রকারভেদ বা থেরাপিউটিক ক্লাস বিবেচনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে অ্যাসিডিটির ওষুধের বিক্রি ছিল ৩ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। দেশের বাজারে এটাই সর্বাধিক বিক্রীত ওষুধ। গত বছর ওষুধটির বিক্রয় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এ শ্রেণীর ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে হেলথকেয়ার। সারজেল নামে এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করেছে হেলথকেয়ার। সেকলো নামে বিক্রি করেছে স্কয়ার। এ শ্রেণীর ওষুধ বিক্রয়ে হেলথকেয়ারের পরেই আছে ইনসেপ্টা, কোম্পানিটি প্যানটোনিক্স নামে বিক্রি করেছে অ্যাসিডিটির ওষুধ।

গত অর্থবছর দ্বিতীয় সর্বাধিক বিক্রীত ওষুধ ছিল সেফালোস্পোরিন অ্যান্ড কম্বিনেশন, যা অ্যান্টিবায়োটিক। এ শ্রেণীর ১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয় গত অর্থবছর। ওষুধটির বিক্রয় প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে হেলথকেয়ার ও ইনসেপ্টা।

গত বছর সর্বাধিক বিক্রীত তৃতীয় ওষুধের থেরাপিউটিক ক্লাস ক্যালসিয়াম। হাড় ও অস্থিসন্ধির চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এ শ্রেণীর ওষুধ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ ওষুধের বিক্রি ছিল ১ হাজার ২ কোটি টাকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রির এ পরিমাণ কমেছে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। বিক্রির পরিমাণ ৯২৫ কোটি টাকা। গত বছর এ ওষুধ বিক্রয়কারী শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠান হলো স্কয়ার, রেডিয়েন্ট ও হেলথকেয়ার।

২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রীত ওষুধের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে ছিল অ্যান্টিএপিলেপটিকস। স্নায়ুতন্ত্রজনিত রোগের এ ওষুধ বিক্রি হয়েছে ৯০৭ কোটি টাকার। বিক্রয় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

শীর্ষ ১০ থেরাপিউটিক ক্লাসের মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে ছিল নন-নারকোটিক। এ শ্রেণীর ওষুধ বিক্রি ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৩৭ কোটি টাকার। ষষ্ঠ থেকে দশম অবস্থানে থাকা থেরাপিউটিক ক্লাসগুলো হলো যথাক্রমে অ্যান্টিলিউক অ্যান্টি-অ্যাজমাটিকস, অ্যান্টিরিউমেটিক নন-স্টেরয়েড, অ্যান্টিহিসটামিনস, স্ট্যাটিন্স ও হিউম্যান ইনসুলিন।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের খুচরা বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ১০ ওষুধের শীর্ষে রয়েছে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্র্যান্ড সারজেল। এ ওষুধের বিক্রির পরিমাণ ৭১৮ কোটি টাকা। এর পরই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে রেনাটার ম্যাক্সপ্রো। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইনসেপ্টার প্যানটোনিক্স। চতুর্থ থেকে দশম অবস্থানে থাকা সর্বোচ্চ বিক্রীত ব্র্যান্ডগুলো হলে স্কয়ারের সেকলো, সেফ-থ্রি, রেডিয়েন্টের এক্সিয়াম, বেক্সিমকোর নাপা, একমির মোনাস, বেক্সিমকোর বাইজোরান ও নাপা এক্সট্রা।

সুত্র : বণিক বার্তা

Exit mobile version