প্রধান খবর
২২ কোটি টাকার ইনজেকশন বিনামূল্যে পেল বাংলাদেশের শিশু রায়হান
দুরারোগ্য ও বিরল এক ধরণের স্নায়ুরোগ স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি (এসএমএ)। এটি দেহের ঐচ্ছিক পেশীকে প্রভাবিত করে, যা মেরুদন্ডের স্নায়ুদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নার্ভের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে যুক্ত পেশীগুলোতেও দূর্বলতা ও সংকোচন দেখা যায়। জিন দ্বারা প্রভাবিত এই রোগটি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়।
দুরারোগ্য স্নায়ুরোগ স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফিতে (এসএমএ) আক্রান্ত হয়েছে মানিকগঞ্জের ২২ মাসের শিশু রায়হান। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস এন্ড হাসপাতালে (নিনস্) বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন। আশার কথা যে, তার চিকিৎসায় দেশে প্রথম বারের মতো দেয়া হলো ব্যয়বহুল জিন থেরাপির ইনজেকশন। এই রোগের এক ডোজ ওষুধের দাম ২২ কোটি টাকা। কিন্তু রায়হানের পরিবারকে কিনতে হয়নি; বিনামূল্যেই পেয়েছে এই ইনজেকশন।
জানা গেছে, হাসপাতালের চিকিৎসকদের আন্তরিক চেষ্টা ও ভাগ্যের জোরে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিসের একটি বৈশ্বিক সিএসআর ক্যাম্পেইনের লটারিতে অংশ নিয়ে ২২ কোটি টাকার এই ওষুধটি বিনামূল্যে পেল শিশুটি। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে সীমিতসংখ্যক এই ওষুধ পাঠানোর জন্য লটারি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই লটারিতে বাংলাদেশের অত্যাধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের শিশু নিউরোলজি বিভাগ অংশগ্রহণ করে লটারি জিতে নেয়। জিন থেরাপির পর রায়হান সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছেন চিকিৎসকগণ।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ জানান, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসএমএ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলো এই জিন থেরাপি। মঙ্গলবার সেই ইনজেকশনটি রায়হানের শরীরে পুশও করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম সহ অন্যান্য চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।
চিকিৎসকগণ জানান, স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি একটি বিরল ও জটিল স্নায়ুতন্ত্রের জন্মগত রোগ, যা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত শিশুর ঘাড় শক্ত হয় না, শিশুটি বসতে পারে না। তবে কথা বলতে পারে, যোগাযোগ করতে পারে-কারণ বুদ্ধি স্বাভাবিক থাকে। তবে শরীরের নড়াচড়া কম থাকে, ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টের কারণে শ্বাসের জন্য যে মাংসপেশি, তা দুর্বল হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে রোগী মারা যায়।
জানা গেছে, বিরল হলেও প্রতিবছর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের আউটডোরে এসএমএ আক্রান্ত অন্তত ৩০ জন রোগী আসে। এর বাইরে শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেলেও এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা সেবা নেয়।
ওই হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক লিমন রোগীর সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে লেখেন, ’সৌভাগ্যবান কারো সাথে এভাবে সেলফি তোলার আনন্দই আলাদা। সারা বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করে রায়ান নামের ছেলেটি লটারির মাধ্যমে এই ২২ কোটি টাকা দামের একটি মাত্র সিঙ্গেল ডোজ ওষুধ জিতে নিয়েছে। NINS সব সময়ই নতুন নতুন ইতিহাস তৈরি করে, এবারও তাই করলো। ‘