প্রধান খবর

‘মৃত্যুর প্রধানত কারণ হলেও দেশে স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা অপ্রতুল’

Published

on

মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হলেও দেশে স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল। ঢাকায় মাত্র দুইটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার সুবিধা রয়েছে। স্ট্রোকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমাতে সারাদেশে এই সুবিধা চালু করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। এ ছাড়া দেশে ডায়াবেটিক রোগীদের ব্যবস্থাপনার ওপরও জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ দেশের উন্নয়নের পথে অন্তরায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুভাষ কান্তি বাংলাদেশে স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বাধাগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের সমাপনী দিনে তিনি গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ স্ট্রোক। বেশিরভাগ স্ট্রোক (প্রায় ৮৫%) ইস্কেমিক এবং এটি একটি জরুরি চিকিৎসার আওতাভুক্ত রোগ। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে ইস্কেমিক স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু ঢাকায় মাত্র ২টি সরকারি ও ৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে যেখানে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার সুবিধা পাওয়া যায়। তাই স্ট্রোক থেকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমাতে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ট্রোক ব্যবস্থাপনা সুবিধা চালু করা উচিত।

আজ শুক্রবার প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের সমাপনী দিনে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেশনে অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য মো. শারফুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া হাসিন বলেন, বিএসএমএমইউর প্যালিয়াটিভ কেয়ার টিমের ১০৪ জন রোগী ও ২৪ জন সদস্যের উপর একটি গবেষণা চলানো হয়। এখানে বেশিরভাগই ছিল বিবাহিত মহিলা, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ক্যানসার রোগী এবং তাদের প্রধান লক্ষণ ছিল ব্যথা। যদিও সেবাদানকারীরা ছিল প্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত, তবুও তারা বিভিন্ন মনোসামাজিক ও আত্মিক সেবাদানের ব্যাপারে বাধাগ্রস্থ হয়।

Advertisement

‘হোম-বেসড প্যালিয়াটিভ কেয়ার’ রোগীরা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা এই সেবায় অনেক বেশি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এই সেবাকে ত্বরান্বিত ও প্রসার ঘটাতে আরও বেশি লিঙ্গভিত্তিক সেবা দিতে হবে এবং জনবল ও উপকরণ বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সেবাদানকারীদের মনোসামাজিক ও আত্মিক সেবাদানের দক্ষতা বাড়াতে হবে।

সীমিত সম্পদ অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিএসএমএমইউর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহজাদা সেলিম গবেষণায় দেখেন যে, উন্নয়নশীল দেশের জন্য টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের ব্যবস্থাপনা একটি বড় বাঁধা। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় অনেক উন্নয়নশীল দেশেই অল্প কিছু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছে যারা ডায়াবেটিস ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিষয়ে অভিজ্ঞ। একই সঙ্গে বাস্তবতা এটাও যে, মুখে খাওয়ার ওষুধের স্বল্পতা, ইনসুলিন, ইনজেকশন ডিভাইস নিজে নিজে ব্লাড সুগার পর্যবেক্ষণেরও ঘাটতি রয়েছে।

এতে বলা হয়, রোগীর যদি ইনসুলিন বা ইনজেকশন কেনার সামর্থ্য না থাকে তবে টাইপ-১ ডায়াবেটিস মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। মধ্য এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে জনসংখ্যা, জীবনযাপন প্রণালী ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীর বোঝা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যা কি না ২০০০ সালে বৈশ্বিক রোগীর ৬৭% ছিল এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৭৮%-এ উন্নীত হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দক্ষ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি ও একটি আদর্শ ব্যবস্থাপনার দিক নির্দেশনা অনুসরণ করা যেতে পারে।

এই সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো শারফুদ্দীন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউর নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী।

Advertisement

Trending

Exit mobile version