সম্প্রতি চিকিৎসায় অবহেলায় এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌফিক এনামের মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ উঠায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘তিন চিকিৎসকের অবহেলায় চিকিৎসকের মৃত্যু” শিরোনামে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদ সর্ম্পকে বিআরবি হাসপাতাল বক্তব্য প্রদান করেছে। বক্তব্যটি নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হল-
ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড বিআরবি গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর হতে আমরা সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা প্রদান করে আসছি। গত ২০ ও ২১ জুন’ ২০২১ ইং তারিখে কতিপয় গণমাধ্যমে বিআরবি হসপিটালস ও উক্ত হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারী এন্ড পেনক্রিয়াটিক সার্জন ও প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী-কে জড়িয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এধরনের সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত হওয়ায় বিআরবি হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। উক্ত সংবাদের বিষয়ে হাসপাতালের কর্তপক্ষের বক্তব্য নিম্নরূপ-
ডা. মোঃ তৌফিক এনাম (৩২), এভারকেয়ার হাসপাতালের এনেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক। তিনি গত ১২-০৫-২০২১ ইং তারিখে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিআরবি হসাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীর বাবার চিকিৎসক স্বনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট যিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে কর্মরত আছেন এবং রোগীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী ডাক্তার যিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে এনেস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত, উক্ত দু’জনের বিশেষ অনুরোধে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীকে ঐ দিন রাত ১০টায় প্রথম দেখতে আসেন ।
উল্লেখ্য যে, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন এবং দীর্ঘ আড়াই মাস তিনি সরাসরি কোন রোগী দেখেননি ও অপারেশন করেননি। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশ এর হেপাটোবিলিয়ারী পেনক্রিয়াটিক সার্জারি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট-এর পথিকৃত ও ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রথম সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভ‚য়সী প্রশংসা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি আরো দুইটি সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করেন।
অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব খান, গত ০৫-০৫-২০২১ ইং তারিখে, ডা. মোঃ তৌফিক এনাম এর পিত্তথলীর পাথর এর জন্য ইসলামিক ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল এ ল্যাপারোস্কপিক কোলিসেকটমি অপারেশন করেন। অপারেশন এর কারনে পিত্তনালী বাধাঁপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে ইআরসিপি (ERCP) করার জন্য ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল এ রেফার করা হয়। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রাএন্টারোলজি অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ১১-০৫-২০২১ ইং তারিখে ERCP করেন। ERCP এর মাধ্যমে পিত্তনালীতে স্টেন্ট দেয়া (stenting) সম্ভব হয়নাই। ERCP পরবর্তী রোগীর একিউট পেনক্রিয়াটাইটিস হয়েছে বলে গত ১২-০৫-২০২১ ইং তারিখ ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে রোগীর ছাড়পত্রে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য যে, প্রথম অপারেশন ও ERCP এর সাথে বিআরবি হসপিটালস ও অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না, যা দায়েরকৃত মামলার বাদী নিজেই উল্লেখ করেছেন।
রোগীকে দেখতে এসে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী ডা. মোঃ তৌফিক এনাম কে বলেন যে কোভিড এর কারণে তিনি গত আড়াই মাস কোনো রোগী দেখেন নাই, হাসপাতালে ও আসেন নাই এবং কোনো অপারেশন করেন নাই। দুজন ডাক্তার এর আকন্ঠ অনুরোধ এবং মানবিক দিক বিবেচনায় তিনি উনাকে দেখতে আসেন এবং রোগী ডা. মোঃ তৌফিক এনাম এজন্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী কে ধন্যবাদ জানান।
প্রথমেই অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন যে রোগীর অপারেশন জরুরি। কিন্তু তার একিউট পেনক্রিয়াটাইটিস (Acute pancreatitis) থাকায় কোন অবস্থাতেই এই অপারেশন এখন সম্ভব নয়। প্রথমে একিউট পেনক্রিয়াটাইটিস কন্ট্রোল করতে হবে। এর জন্য তিনি অ্যান্টিবায়োটিক সহ পেনক্রিয়াটাইটিস এর প্রয়োজনীয় ঔষধ দেন। এই সময় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী প্রথম জানতে পারেন যে ডা. মোঃ তৌফিক এনাম দীর্ঘ দিন যাবত হেপাটাইটিস বি রোগী আক্রান্ত এবং বিভিন্ন লিভার বিশেষজ্ঞ (হেপাটোলজিস্ট) এর চিকিৎসাধীন ও ফলোআপে আছেন। রোগী দীর্ঘ দিনের হেপাটাইটিস বি আক্রন্ত হওয়ায়, ইহা থেকে সৃষ্ট লিভার সিরোসিসের জন্য ক্রমশ লিভার ফাংশন খারাপ হচ্ছিল যার ফলে একিউট পেনক্রিয়াটাইটিস এর চিকিৎসার সাথে লিভারের বিভিন্ন সার্পোটিভ ট্রিটমেন্ট এবং অনেক গুলি এলবুমিন ইনজেকশন রোগীকে দিতে হয়েছিল তবুও রোগীর একিউট পেনক্রিয়াটাইটিস এবং লিভার ফাংশন আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছিলনা। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীর সার্বিক অবস্থা নিয়মিত রোগীর বাবা জনাব মোঃ আকতারুজ্জামান মিয়া, রোগীর স্ত্রী ডা. মেহেবুবা সুলতানাকে জানান।
উল্লেখ্য যে রোগীর পেনক্রিয়াটাইটিস যখন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছিলনা তখন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বিকল্প হিসেবে বাঁধাপ্রাপ্ত পিত্ত বিনা অপারেশনে ড্রেইন (PTBD) করার জন্য রোগীর সহকর্মীর মাধ্যমে রোগীর কর্মস্থল এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্ট্রাভেনশনিস্ট এর মাধ্যমে পিত্ত ড্রেইন (PTBD) করার জন্য ব্যবস্থা করেন। রোগীর বাবা ও স্ত্রী এভারকেয়ার হাসপাতালে রোগীর এমআরসিপি সহ সমস্ত ডকুমেন্ট নিয়ে দেখা করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে ইন্ট্রাভেনশনিস্ট PTBD করতে সম্মত হন। কিন্ত রোগীর বাবা ও স্ত্রী তাতে রাজী হন নাই। উপরন্তু রোগী ডা. তৌফিক এনাম নিজে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীকে সরাসরি টেলিফোন করেন যে উনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন না। PTBD করাতে পারলে রোগী জন্ডিস এবং লিভার ফাংশন এর উন্নতি হতো, কিন্তু রোগীর বাবা, স্ত্রী ও রোগীর নিজে না রাজীর জন্য সেটা সম্ভব হয় নাই।
এরপর রোগীর পেনক্রিয়াটাইটিস অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে গত ২৭-০৫-২০২১ (বৃহষ্পতিবার) তারিখে অপারেশন এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর স্বজন অপারেশন এর ২ দিন পূর্বে ডাক্তারের নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও রোগীকে বাহিরের তরল জাতীয় খাবার খেতে দেন, ফলে রোগীর আবার পেটের ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং পেনক্রিয়াটাইটিস অবস্থার অবনতি ঘটে। এমতাবস্থায় অপারেশন বাতিল করা হয় এবং আবার মুখে খাবার বন্ধ করা হয় এবং পুন:রায় নাকে নল, ক্যাথেটার (NGTube, catheter) সহ পেনক্রিয়াটাইটিস এর অন্যান্য চিকিৎসা আরম্ভ করা হয়। অত্যন্ত দু:খের বিষয় আরজিতে রোগীর বাবা ২৭-০৫-২০২১ (বৃহষ্পতিবার) তারিখে অপারেশন বাতিল এর জন্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী ও বিআরবি হসপিটাল এর আর্থিক স্বার্থ জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন। ৩ দিন পর রোগীর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে গত ৩০-০৫-২০২১ (রবিবার) তারিখে অপারেশন করার দিন ধার্য হয়। অপারেশনের পূর্বে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী, রোগীর বেড এর পাশে দাড়িয়ে (রুম নং ৬১২) রোগীর বাবা জনাব মোঃ আকতারুজ্জামান মিয়া, রোগীর স্ত্রী ডা. মেহেবুবা সুলতানা সহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের বলেন যে, ডা. মোঃ তৌফিক এনাম এর অবস্থা খুবই জটিল এবং সংকটাপন্ন, তিনি ডা. তৌফিক এর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, বাকী মহান আল্লাহর তা’লার ইচ্ছা। আপনারা দোয়া করবেন।
গত ৩০-০৫-২০২১ (রবিবার) তারিখে অপারেশন এর সময় ল্যাপারোস্কাপির কলিগেষ্টেকটমির সময় বাধাপ্রাপ্ত পিত্তনালীর ক্লিপ অপসারণ করা হয় এবং খাদ্য নালীর সাথে পিত্তনালীর সংযোগ দেওয়া হয় যেটাকে বিলিয়ারী রিকনস্ট্রাকশন (Biliary Reconstruction) বলে। অপারেশন সফল হয়েছে এবং খাদ্য নালীর সাথে পিত্তনালীর সংযোগ সম্ভব হয়েছে তা অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীর বাবাকে অপারেশন রুমের পাশের কাউন্সিলিং রুমে ডেকে এনে অবহিত করেন। তিনি আরও বলেন যে পেটে পেনক্রিয়াটাইটিস জনিত কারনে পুঁজ ও নেক্সোস্ড টিস্যু ছিল যা তিনি অপসারণ করেছেন। এই জিনিসগুলো তিনি রোগীর বাবাকে দেখান। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে উনার ছেলে দীর্ঘদিন হেপাটাইটিস-বি আক্রান্তের ফলে লিভার পুরোপুরি সিরোসিস হয়ে গেছে। রোগীর বাবা খাদ্যনালীর সাথে পিত্তনালীর সংযোগ সম্ভব হওয়ায় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীকে ধন্যবাদ জানান। রোগী যখন অপারেশনের টেবিল থেকে পাশে আনা ICU বেডে নেওয়ার (shift) জন্য প্রস্তুতি চলছে ঠিক তখনই হঠাৎ করে হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ (Cardiac Arrest) হয়ে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে এনেস্থেসিয়ার অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. হাশিম রাব্বি, ডা. মির্জা শামসুল আরেফিন সহ অন্যান্য চিকিৎসক CPR সহ অন্যান্য জরুরী চিকিৎসা প্রদান করেন এবং ICU বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস সহ অন্যান্য ICU ডাক্তার ও উক্ত রিসাসিটেশন এ অংশ গ্রহন করেন। উক্ত সময়ে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীর বাবা মোঃ আকতারুজ্জামান মিয়াকে অপারেশন রুমে ডেকে এনে রোগী ওটি টেবিল থেকে বেডে শিফট হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে হঠাৎ করে হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ (Cardiac Arrest) হয়েছে বলে অবহিত করেন এবং বলেন যে সবাই রিসাসিটেশন এর জন্য যা যা করার দরকার তা করছেন। রিসাসিটেশন চলাকালীন রোগীর বাবা অপারেশন রুমে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীর পাশে দাড়িঁয়ে ছিলেন। রিসাসিটেশন চলমান অবস্থায় রোগীকে ICU তে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রোগী ডা. তৌফিক এনাম শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
রোগীর মৃত্যুর পর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী এবং তার সার্জিক্যাল টিম ICU বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তারবৃন্দ রোগীর স্ত্রী ডা. মেহেবুবা সুলতানা, রোগীর শ্বশুর এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে রোগীর অপারেশন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তারিত অবহিত করেন। এই সময় ডা. তৌফিক এনামের এভারকেয়ার হাসপাতালের সহপাঠীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া বিআরবি হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রোগীর স্ত্রী ডা. মেহেবুবা সুলতানা বলেন, “স্যার আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আপনার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমার স্বামীর জন্য দোয়া করবেন”।
রোগী বিআরবি হাসপাতালে বিগত ১২-০৫-২০২১ ইং তারিখে ভর্তি হয়ে ১৮ দিন চিকিৎসারত অবস্থায় ছিলেন। অত্যাবশ্যকীয় ল্যাবরেটরী টেস্ট, এন্টিবায়োটিক, এলবুমিন সহ বিভিন্ন ঔষুধ, নিউট্রিশনাল সার্পোট সহ ইমেজিং বাবদ খরচ সর্বমোট ৪,২৫,০৪৫ টাকা (চার লক্ষ পচিঁশ হাজার পয়তাল্লিশ টাকা) যা রোগীর স্বজনরা বিভিন্ন সময়ে স্বতস্ফুর্তভাবে হাসপাতালে ডিপোজিট করেন। অপারেশনের জন্য উক্ত রোগী থেকে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী ও তার সার্জারি টিম কোন প্রকার ফি গ্রহন করেন নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় খরচ গ্রহন করে ৭২,৯৫৫ (বাহাত্তর হাজার নয়শত পঞ্চাঁন্ন) টাকা ফেরত দিয়েছে। এক্ষেত্রে কোন পক্ষের সাথেই কোন রকম বাগ-বিতন্ডা হয়নি এবং রোগীর স্বজনদেরকে টাকা দেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে কোন প্রকার চাপ দেয়া হয়নি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, রোগীর বাবা ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা আদায়ের জন্য লাশ আটকে রেখে টাকা আদায়ের যে অভিযোগটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে করেছেন তা সর্ম্পুণ মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর।
ডা. তৌফিক এনাম দীর্ঘদিন দূরারোগ্য হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যায়ে লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis) ভুগছিলেন। আপনারা অবগত আছেন যে লিভার সিরোসিস একটি মরণ ঘাতক ব্যাধি যা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। রোগী দীর্ঘদিন (দশ বছর এর অধিক) হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত হয়ে লিভার বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোগীর প্রথম অপারেশন কালে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের কনসালটেন্ট, ল্যাপারোস্কপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আবদুল ওহাব খান নিজেই উনার রিপোর্ট এ রোগীর লিভার সিরোসিস আছে উল্লেখ করেছেন । পরবর্তীতে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী ফাইব্রোস্কেন (Fibro scan) সহ বিভিন্ন পরীক্ষা এবং সবশেষে অপারেশনের সময় ডা. তৌফিক এর লিভার পুরোদমে সিরোসিস হয়েছে দেখতে পেয়েছেন এবং তার বাবাকে অপারেশন এর পর পরই তা কাউন্সিলিং রুমে বলেছেন। উল্লেখ্য যে হেপাটাইটিস-বি ও লিভার সিরোসিস কারো শরীরে থাকলে অন্য যে কোন রোগের জটিলতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করে এবং চিকিৎসার ফলাফলকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে চাই যে ডা. তৌফিক এনামের এত বড় জটিল মরণঘাতী রোগ থাকা স্বত্তে¡ও তার বাবার পেশকরা আরজি, বিভিন্ন টেলিভিশন এবং সংবাদ মাধ্যমে কখনও তা উল্লেখ করেন নাই। ডা. তৌফিক এনামের মৃত্যুর সাথে জড়িত রোগের তথ্য সমূহকে গোপন করে বিভিন্ন অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন।
উল্লেখ্য রোগীর অপারেশনের পূর্বেই অপারেশন এর জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয় এবং সংগ্রহ করা হয়। অপারেশন এর সময় অথবা পরে আরো রক্ত লাগতে পারে বলা হয়। অপারেশনের সময় বা এরপর রক্ত প্রদান নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সাথে কোন প্রকার বাক-বিতন্ডা হয়নি। অতএব রক্তের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাহা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
ডা: তৌফিক এনাম এর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং তার বাবা, মা, স্ত্রী ও পরিবারবর্গের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি, একই সাথে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় যে, তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার বাবা মোঃ আকতারুজ্জামান মিয়া বিআরবি হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রাপ্ত বাংলাদেশের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর পথিকৃত সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীকে জড়িয়ে নানা রকমের অসত্য ও মানহানিকর সংবাদ প্রচারে লিপ্ত রয়েছেন।
অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, পূর্বের অপারেশন এবং অপারেশন পরবর্তী প্রসিডিউর থেকে সৃষ্ট জটিলতাসহ এবং দীর্ঘদিন হেপাটাইটিস-বি থেকে সৃষ্ট লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত এই রকম সংকটাপন্ন একজন ডাক্তার রোগীকে বাচাঁনোর জন্য সম্পূর্ণ মানবিক দিক বিবেচনা করে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, যা রোগীর স্ত্রী ডা. মেহেবুবা সুলতানা, উনার বাবা, বিআরবি এবং এভারকেয়ার হসপিটালের ডাক্তারবৃন্দ, হসপিটাল এডমিনেস্ট্রশন এর সম্মুখে রোগীর মৃত্যুর পর বলেছেন। আশ্চার্য্যের বিষয়, রোগীর বাবা জনাব মোঃ আকতারুজ্জামান মিয়া সে বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তো দুরের কথা, এখন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মানহানিকর মামলা, সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা বক্তব্য ও নানারকম অপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিআরবি হাসপাতাল স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্নভাবে সেবা প্রদানে বিশ্বাসী। বিআরবি হাসপাতাল ও অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী-কে জড়িয়ে যে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এধরনের সংবাদ প্রকাশের পূর্বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য না নেয়ায় প্রকাশিত সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ হয়নি। বিআরবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ সকলের নিকট হতে আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কামনা করছে।