শেবাচিম হাসপাতালের বর্জ্য যত্রতত্র, স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ না হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল ভবন সংলগ্ন খোলা জায়গাগুলোতে গর্ত করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

করোনাকালে শেবাচিম হাসপাতালের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসপাতাল কম্পাউন্ড অনেকটাই ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হতে শুরু করেছে। খোলা জায়গাতে ময়লা ফেলায় কুকুর ও পাখিদের তাড়নায় তা যেমন ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়, তেমনি দুর্গন্ধে নাজেহাল হচ্ছে চিকিৎসাসেবা গ্রহীতা থেকে শুরু করে আশপাশের বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ময়লার জন্য হাসপাতাল এলাকার পরিবেশটাই দূষিত হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে আশপাশের মানুষ নয়, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও তাদের স্বজনরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এ থেকে দ্রুত তারা পরিত্রাণেরও দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য অপসারণ নিয়মিত করা হচ্ছে। তারপর তা হাসপাতাল ভবনের পেছনের অংশের নির্ধারিত স্থানে ফেলা হলেও করোনার শুরু থেকে সেখান থেকে নগর কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ এড়াতে তা অপসারণ করেনি। কারণ সেখান থেকে খোলা ট্রাকে করে ময়লাগুলো নগরের মধ্য দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডাম্পিং প্লেসে নিয়ে যাওয়া হতো। আর এ কাজটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা স্বাস্থ্য বিভাগের কোন সহযোগিতা ছাড়াই করে আসতো।

তবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শুরুর দিকে এসব বর্জ্য হাসপাতাল থেকে ডাম্পিং প্লেসে নিয়ে যাওয়াকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর সিটি করপোরেশন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আলোচনায় হাসপাতালের পেছনের নির্ধারিত স্থানে গর্ত করে ফেলা শুরু হয়। এছাড়া করোনা ওয়ার্ডের কিছু বর্জ্য নতুন ভবনের পাশেই ফেলতে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জায়গাগুলো বর্জ্যে ভরে গেলে সেগুলোকে মাটি চাপা দিয়ে নতুন করে নতুন স্থানে গর্ত করে ময়লা ফেলা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের পাশে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলায় এলাকাটি পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। এতে জরুরি বিভাগের গেটসহ আশেপাশের এলাকায় অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

এক রোগীর স্বজন মারুফা বলেন, বর্তমানে যে স্থানে হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল বর্জ্যসহ সকল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সেখানে অপচনশীল প্লাস্টিকের দ্রব্য যেমন সিরিঞ্জ, ব্লাড ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, গজ কাপর, গ্লাভস, মাস্কসহ নানান কিছু রয়েছে। এগুলো পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকারক। আবার দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষের এখান দিয়ে হাঁটা মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিন্ময় নামে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতালের বর্জ্য যদি সব এক জায়গাতে ফেলা হয়, তাহলে কোনটা করোনায় আক্রান্ত রোগীর কোনটা সাধারণ রোগীর তাও বা কীভাবে বুঝবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইন্টার্ন হোস্টেলের পেছনের খেলার মাঠের বিপরীতে প্রায় এক দশক আগে টিন দিয়ে স্থাপিত ইনসিনারেটর ও অটোক্লেভ মেশিনের ঘরটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরটির চারদিকে আগাছার জন্ম নেওয়ায় সেটা তেমন একটা চোখে পড়ছে না।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১১ সালে শেবাচিম হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ধ্বংসকারী মেশিন দেওয়া হয়েছিল, তা বছর খানেক পরই ওই মেশিন বিকল হয়ে যায়। পরে তা সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর এই ক্লিনিক্যাল বর্জ্যই রোগ-বালাই ছড়িয়ে পরার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন সবসময় হাসপাতালের বর্জ্যগুলো নিতো, কিন্তু গত এপ্রিল থেকে তারা ময়লাগুলো নিচ্ছে না। তাই হাসপাতালের আশপাশে মাটিতে বড় বড় করে বর্জ্যগুলো ফেলে তা আবার ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এভাবে করতে করতে এখন হাসপাতালের সামনে ছাড়া আর কোথায় জায়গা খালি না থাকায় সেখানেই বর্জ্য ফেলতে হচ্ছে। আর হাসপাতাল ভবনের পেছনের দিকটাতে কলেজ থাকায় সেখানে ফেলা যাচ্ছে না।

Exit mobile version