মানুষের শরীরে সংক্রমণক্ষম ইঁদুরের দেহ থেকে কৃমি ‘গনজাইলোনেমা’ শনাক্ত করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের একদল গবেষক। এ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্তের নেতৃত্বে একদল গবেষক এক বছরের গবেষণায় এই অন্তঃপরজীবী কৃমি শনাক্ত করেছেন। গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন একই বিভাগের প্রভাষক এসএম আবদুল্লাহ এবং মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী অমৃত বর্মণ।
গবেষকদের দাবি ইঁদুরের দেহ থেকে ‘গনজাইলোনেমা’সহ শনাক্তকৃত ৫টি কৃমি মানুষের দেহে দাঁতের ব্যথা, অন্ননালি প্রদাহ, গলবিল প্রদাহ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, স্নায়ুবিক বিকলতা, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, খিচুনি, স্ট্রোক, স্থায়ী ব্রেইন ড্যামেজ, অন্ধত্ব, মাংসপেশিতে ব্যথা, আচরণগত অসঙ্গতি ঘটাতে পারে।
গবেষক দল বলেন, আমরা দীর্ঘ এক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বস্তি, মুদি দোকান, শাক-সবজির দোকান ও বাসাবাড়ি থেকে ৭০টি ইঁদুর সংগ্রহ করি। যার মধ্যে ২০টি ধাঁড়ি ইঁদুর, ১৫টি কালো ইঁদুর, ২৫টি বাদামি ইঁদুর এবং ১০টি নেংটি ইঁদুর ছিল। এর মধ্যে ৫০টি (৭১.৪২ শতাংশ) ইঁদুর বিভিন্ন ধরনের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত। ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকা থেকে সংগৃহীত ইঁদুরে সবচেয়ে বেশি (৮৫ শতাংশ) কৃমির সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মুদি দোকান, বাসাবাড়ি এবং ধানক্ষেত থেকে সংগৃহীত ইঁদুরের মধ্যে যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ, ৬৬.৬৬ শতাংশ ও ৫৩.৩৩ শতাংশ আক্রান্ত ইঁদুর পাওয়া গেছে। এসব ইঁদুরের দেহ থেকে সংগৃহীত কৃমিগুলোর ৮০ শতাংশই মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম বলে জানান গবেষক দল।
গবেষকরা আরও জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সংগৃহীত ইঁদুরের দেহে ৫ ধরনের কৃমি অধিক হারে পাওয়া গেছে। কৃমিগুলোর মধ্যে ‘গনজাইলোনেমা’ কৃমি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন শেকৃবির এই গবেষক দল।
গবেষক অমৃত বর্মণ জানান, আক্রান্ত ইঁদুরের পায়খানার মাধ্যমে কৃমিগুলোর ডিম খোলা পরিবেশে আসে। এই ডিমগুলো যখন পাখাবিহীন মাছিজাতীয় কীট বিজ্ঞানের ভাষায় যেগুলো ফ্লি নামে পরিচিত, গুবরে পোকা, আরশোলা ইত্যাদি ভক্ষণ করে তখন এদের দেহে মানুষের দেহে আক্রমণ করতে সক্ষম কৃমির লার্ভা তৈরি হয়। খাবারের সঙ্গে এসব কৃমির লার্ভা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে আক্রান্ত হয়। গনজাইলোনেমা নিওপ্লাস্টিকাম দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের লালা ক্ষরণ, দাঁতের ব্যথা, অন্ননালি প্রদাহ, গলবিল প্রদাহ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, স্নায়ুবিক বিকলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। ‘মনিলিফরমিস’ মানুষের ক্ষুধামন্দা, বমি, গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। ‘হাইমেনোলেপিস ডিমিনুটা’ পেটে ব্যথা, ডায়রিয়ার সংক্রমণ ঘটায়। ‘টেইনিয়া টেইনিফরমিস’ দ্বারা আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা, খিচুনি, স্ট্রোক, স্থায়ী ব্রেইন ড্যামেজ, অন্ধত্ব, মাংসপেশিতে ব্যথা, আচরণগত রোগ দেখা দেয়।
কৃমি দ্বারা সৃষ্ট ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধে সাধারণ জনগণের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্ত পরামর্শ দিয়ে বলেন, ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করতে স্যানিটেশন অবস্থার উন্নতি এবং সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা উচিত, খাদ্যদ্রব্য ঢেকে ও সবসময় ইঁদুর থেকে দূরে রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে অতিদ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত রোগ সংক্রমন সম্পর্কিত জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে হবে।