মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ নম্বর সেক্টরের যশোর, ঝিনাইদহ অঞ্চলে যুদ্ধ করেন মো. আব্দুল ওয়াদুদ। ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে প্রথম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার হন তিনি। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বরিশালে যোগ দেন। এরপর বদলি হয়ে যান নীলফামারী। ১৯৮৩ সালের ২৮ মার্চ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
স্বাধীন দেশের আলো-বাতাস আব্দুল ওয়াদুদ খুব বেশিদিন উপভোগ করতে না পারলেও রেখে যান দুই সন্তান আখতারুজ্জাহান মুক্তি ও মো. আব্দুল মুঈদকে। ছোট সেই শিশু এখন অনেক বড়। তাদেরও ঘর-সংসার হয়েছে। তবে তারাও এখন মৃত্যুপথযাত্রী।
বড় সন্তান আখতারুজ্জাহান মুক্তি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। ছোট সন্তান আব্দুল মুঈদের দুটি কিডনিই ৯৩ শতাংশ নষ্ট। অর্থের অভাবে দুজনেরই চিকিৎসা বন্ধের পথে। তাদের চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এছাড়া তাদের বাঁচার আর কোনো রাস্তা নেই বলেও জানান নিরূপায় এই দুই ভাই-বোন।
আব্দুল মুঈদের মেয়ের বয়স ১০ বছর। তার নাম ফাইজা তাসনিম মুঈদ। আব্দুল মুঈদ ছোটবেলায় যেমন বাবাকে হারিয়েছিলেন, এবার তার মেয়ে ফাইজা তাসনিম মুঈদ তেমনই মনে হয় বাবাকে হারাতে বসেছেন। কারণ ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কিডনির বেহাল অবস্থা ধরা পড়ার আট মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি কিডনিও প্রতিস্থাপন করতে পারেননি আব্দুল মুঈদ। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে জটিলতা বেশি। খরচও বেশি। কলকাতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার।
চিকিৎসকরা বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব তাকে অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। না হলে বাঁচানো যাবে না। এজন্য খরচ হবে ৩০-৩৫ লাখ টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে জিআইএস কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত মো. আব্দুল মুঈদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ মাসের শেষ দিকে কলকাতা যাওয়ার চিন্তা করছি। তবে যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে ১৪ লাখ টাকা জোগাড় করেছি। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধার নিয়েছি। বাকি টাকা কোথায় পাব, আল্লাহ-ই জানেন।’
আব্দুল মুঈদের এই বিপদে অনেকটাই পাথর বোন আখতারুজ্জাহান মুক্তি। কারণ ভাইয়ের কিডনির সমস্যা ধরা পরার আগেই মুক্তির ধরা পড়ে স্তন ক্যান্সার।
মুক্তি জানান, আব্দুল মুঈদের এক মেয়ে থাকলেও আমার কোনো সন্তান নেই। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা মো. শওকত আলীকে ২০০৭ সালে বিয়ে করেন মুক্তি। বিয়ের কয়েক বছর পরও সন্তান না হওয়ায় হরমোনের চিকিৎসা নেন। চিকিৎসক জানিয়েছে, কোলে সন্তান না এলেও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তির শরীরে ক্যান্সারের উপস্বর্গ দেখা দেয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। ২০১৬ সালের মার্চে যখন ধরা পড়ে, তখন অনেক কিছুই শেষ হয়ে গেছে। ক্যান্সারের শেষ ধাপে মুক্তি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নানার বাড়ি এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপার মনোহরপুর গ্রামের দাদার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে পরবর্তী দুই বছর ভারত-বাংলাদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে খরচ করেছেন ৫০ লাখ টাকা। এখন অবশিষ্ট সব সম্পদ বিক্রি করেও ভাইয়ের ১৪ লাখ টাকার বেশি জোগাড় করতে পারছেন না তারা। অথচ কিডনি প্রতিস্থাপন করতে লাগবে ৩০-৩৫ লাখ টাকা।
এরকম পরিস্থিতিতে তার ক্যান্সারের চিকিৎসা কী দিয়ে হবে, সেটা জানেন না মুক্তি। তিনি জানান, তার ক্যান্সার এখন স্থির। বাকিটা চিকিৎসার ওপর নির্ভর করছে।
মিরপুর-৬ নম্বরের ৮ নম্বর রাস্তার ট ব্লকের ৩/১ বাসার একই ফ্ল্যাটে থাকেন আখতারুজ্জাহান মুক্তি ও মো. আব্দুল মুঈদ।
তাদের ফুপাতো বোনের স্বামী অসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মফিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, এটা আমি ভাবতে পারি না। তাছাড়া ওরা শিক্ষিত, শিক্ষক মানুষ। মানুষের কাছে হাতও পাততে পারে না, আবার চিকিৎসাও করাতে পারে না। ওদের সাহায্যে যদি প্রধানমন্ত্রী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন, তাহলে ওরা বেঁচে যায়।’
আব্দুল মুঈদের চিকিৎসায় যদি কেউ সাহায্য পাঠাতে চান তাহলে নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো।
বিকাশ (পারসোনাল) ০১৮১৮৮৬৬৮৫২। ইউসিবি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর:০৫০৩২০১০০০০১৬২৫২, এক্সিম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর: ৬১১২১০০০১০৭২৪।