গণস্বাস্থ্য কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। কিডনি বিকল ২০৬ জন রোগীর মুখে প্রতিদিন হাসি ফুটছে এ সেন্টারে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত এ সেন্টারে স্বল্প খরচে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যায়। ফলে নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র, দিনমজুর রোগীরা এ সেন্টারে ভিড় করেন।
কৃর্তপক্ষ জানায়, গত দুই বছরে দেড় লাখেরও বেশি কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস হয়েছে এ সেন্টারে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সেন্টারটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ডায়ালাইসিস সেন্টার। সেন্টারটিতে ১০৮টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। বর্তমানে তিন শিফটে প্রতিদিন কিডনি বিকল ২০৬ জন রোগীর ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে।
তিনি জানান, সেবার পরিধি আরও বাড়ানো হবে। আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিদিন চার শিফটে ডায়ালাইসিস শুরু হবে। ইতোমধ্যে আরও ৩৫টি নতুন মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। চার শিফট চালু হলে রাতের শিফটে যেসব কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস করতে আসবেন তাদের জন্য রাতের খাবার ও সকালের খাবারও হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিডনি বিকল একজন রোগীর পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান, পেশা ও মাসিক আয়ের ওপর নির্ভর করে এ সেন্টারে ডায়ালাইসিসের টাকা নেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবার ডায়ালাইসিসের খরচ বাবদ রোগীভেদে সর্বনিম্ন ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়। অন্যান্য বেসরকারি ডায়ালাইসিস সেন্টারভেদে সর্বনিম্ন ২ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সব শ্রেণি-পেশার রোগীকে সাশ্রয়ী খরচে ডায়ালাইসিসের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে গণস্বাস্থ্য কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ হাসপাতালে স্বল্প খরচে ডায়ালাইসিস করাতে পেরে রোগী ও তাদের মুখে হাসি ফুটছে।’
তিনি বলেন, দেশে কিডনি, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে। কিডনি বিকল হলে দুটি উপায় রয়েছে। এক. কিডনি প্রতিস্থাপন, দুই. ডায়ালাইসিস। এ দুভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপন সবচেয়ে সহজ ও কম খরচের চিকিৎসা। কিন্তু কিডনি দানে বিভিন্ন আইনি বাধার কারণে বহু রোগী দেশে চিকিৎসা না করে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ডোনার নিয়ে গিয়ে ডায়ালাইসিস করছেন।
তিনি জানান, কিডনি রোগীরা শুধু ভারতেই বছরে ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করতে যাচ্ছেন।
গত বছর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোগ আইন পাস হয়। আত্মীয়ের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করে এতে বলা হয়, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানি, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি, আপন চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো-খালাতো ভাইবোনরাও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, কিডনি দানের ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা থাকা উচিত হয়। বেঁচে থাকার জন্য একটি কিডনিই যথেষ্ট এবং যে কেউ যে কাউকে কিডনি দান করতে পারবে, এমন নিয়ম করা উচিত। প্রয়োজনে যিনি কিডনি দান করবেন তাদের সরকারিভাবে অর্থসহায়তা করা যেতে পারে।