‘গরীবের ডাক্তার’ মঈনের জন্য এলাকাবাসীর কান্না

করোনা যুদ্ধে শহীদ হওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন গরীব মানুষের কাছ থেকে ফি নিতেন না। যে কারণে তাকে ডাকা হতো গরীবের ডাক্তার নামে। তার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে গোটা চট্টগ্রামে।

ডা. মঈন উদ্দীনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ধারনে। তিনি পরিবারসহ সিলেটের হাউজিংস্টেটে থাকতেন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গ্রামে এসে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দিতেন করোনাভাইরাসে মৃত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। যাদের একেবারেই অসহায় তাদেরকে বিনামূল্যে ওষুধও দিতেন। কম্পানি থেকে প্রাপ্ত ওষুধের স্যাম্পল তিনি বিলিয়ে দিতেন এলাকার অসহায় রোগীদের মধ্যে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুধু এলাকার অসহায় মানুষদেরই সেবা দিতেন না তিনি, সিলেটের চেম্বারে এলাকার কেউ গেলে তাদেরকেও বিনামূল্যে সেবা দিতেন। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এমন গরিবের বন্ধু ডাক্তারকে হারিয়ে শোকে কাঁদছেন। করোনা ভয় উপেক্ষা করেও তারা গ্রাম ও এলাকা থেকে বেরিয়ে পরষ্পরের সঙ্গে স্মৃতি রোমন্থণ করছেন।

ডা. মঈন উদ্দিনের পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন ডা. মঈন। তিন বোন রয়েছে ডাক্তারের। ছাতকের ধারণবাজার নতুন স্কুল থেকে এসএসসি ও সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি এমবিবিএস পাশ করে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তার স্ত্রীও একজন ডাক্তার। এই ডাক্তার দম্পত্তির দুই সন্তানও রয়েছে। ডাক্তারি পেশায় যোগদানের পর তিনি এলাকার মানুষদের ভুলে যাননি।

পল্লী চিকিৎসক পিতা মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন ছেলে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পল্লী চিকিৎসক বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে এলাকায় ছুটে আসতেন। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এমন মানবিক মানুষ মানুষের সেবা করতে গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে মারা গেছেন। এলাকার হিন্দু মুসলিম সবাই এমন মৃত্যুর খবরে মর্মাহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই মৃত্যুসংবাদ শুনে অঝোরে কেঁদেছেন।

এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া বলেন, ‘এলাকার অসহায় হিন্দু-মুসলিম সবাই ডা. মইনুদ্দিনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পেয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসে তিনি এলাকার রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। বিনা ফিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কম্পানি প্রদত্ত ওষুধও বিলিয়ে দিতেন।’

এলাকার মুরুব্বী সোহেল আহমদ বলেন, ‘ডা. মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোন রোগী তার সিলেট চেম্বারে গেলেও তিনি তাদের ফ্রি দেখতেন। মানুষের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার করতেন যাতে রোগীর রোগ অর্ধেক কমে যেতো। মানুষের সেবা করতে গিয়েই মানুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। এমন মানুষের মৃত্যু নেই। তার কর্মেই তিনি বেচে থাকবেন।’

ডাক্তার মঈন উদ্দিনের গ্রামের বাসিন্দা গিরিধর দাস বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। গরিব মানুষকে তিনি বিনামূল্যে সেবা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মানুষ কাঁদছে।’

Exit mobile version