করোনাভাইরাস: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বোচ্চ সতর্কতা

চীনের উহান থেকে দুই মাস আগের প্রাদুর্ভাব ঘটা নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস এই ঘোষণা দেন। খবর বিবিসির।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস শুক্রবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এ বিপদকে খাটো করে দেখতে রাজি নই। এ কারণেই আমরা বলছি, এ ভাইরাসের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। আমরা সতর্কতার মাত্রা ‘উচ্চ’ থেকে ‘সর্বোচ্চ’ ধাপে নিয়ে গেছি।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি বিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ান বলেন, কোনো রোগের ঝুঁকি দেখলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যত ধরনের সতর্কতা জারি করতে পারে, এবারের মাত্রা তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে ৩২৯ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে, যা এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। চীনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৮০০ মানুষের।

চীনের তিনটি বড় এয়ারলাইন্স আবার কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া সাংহাই ফ্যাশন শো এখন অনলাইনে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিন্তু চীনের বাইরে পরিস্থিতি ক্রমশ নাজুক হয়ে উঠছে। অটোমোবাইল ব্যবসার অন্যতম বড় বার্ষিক আয়োজন জেনিভা কার শো স্থগিত করেছে সুইজারল্যান্ড।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি দেশে এই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। চীন থেকে শুরু হলেও নতুন নতুন দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো, আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, ইউরোপের ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও লিথুয়ানিয়ায় প্রথমবারের মত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর সবগুলো ঘটনার সঙ্গেই পাওয়া গেছে ইতালির যোগাযোগ।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। সেখানে ৬৫০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে ২ হাজার ৩৩৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।

তবে চীনের বাইরে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইরানে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮৮ জন, প্রাণ গেছে ৩৪ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকারও আছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে।

বিবিসি শুক্রবার রাতে হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানে অন্তত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর দিলেও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তা অস্বীকার করেছেন।

এর বাইরে জাপানে ১১ জন, হংকং ও ফ্রান্সে দুজন করে এবং ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানে একজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে।

আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, বেলারুশ ও নেদারল্যান্ডসে নতুন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে একজন ব্রিটিশ নাগরিক মারা গেছেন। নিহত ওই ব্রিটিশ নাগরিক জাপানে নোঙর করা ডায়মন্ড প্রিন্স জাহাজের যাত্রী ছিলেন।

Exit mobile version