প্রধান খবর

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ রেনিটিডিন বিক্রি

Published

on

দেশের বাজারে রেনিটিডিন ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ শিল্প সমিতির নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে রেনিটিডিন ওষুধের কাঁচামাল আমদানি উৎপাদন ও বিক্রির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৩১টি ওষুধ কোম্পানি প্রতিবেশী দেশ ভারতের ফারাক্কা নামক একটি কোম্পানি থেকে রেনিটিডিন ট্যাবলেটের কাঁচামাল আমদানি করে। এ ছাড়া ডক্টর রেড্ডি নামক আরেকটি কোম্পানির কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্ল্যাকলিস্টে তালিকাভুক্ত থাকলেও সেখান থেকে এখনও আমদানি করা হয়নি। জনস্বার্থ বিবেচনায় এ দুটি কোম্পানি থেকে রেনিটিডিনের কাঁচামাল আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়া ওই কোম্পানি থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল দিয়ে নতুন করে কোনো রেনিটিডিন উৎপাদন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, বাজার থেকে কোম্পানিগুলো স্ব-উদ্যোগে রেনিটিডিন ট্যাবলেট প্রত্যাহার করে নেবে। এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে আজ সোমবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে বাজার থেকে রেনিটিডিন প্রত্যাহার, নতুন করে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদন না করার বিষয়ে সর্বসম্মত হন। ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও জানান, বৈঠকে জিএসকে কোম্পানির প্রতিনিধিও ছিল। তারাও বাজার থেকে রেনিটিডিন তুলে নেবে।

তিনি বলেন, রেনিটিডিন কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। কোম্পানিগুলো বাজার থেকে রেনিটিডিন নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে ক্ষতিকর কিছু আছে কিনা তা দেখে ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে অবহিত করবে। এ ছাড়া অধিদফতর নিজস্ব উদ্যোগে রেনিটিডিন ট্যাবলেটের গুণগত মান পরীক্ষা করবে।

Advertisement

উল্লেখ্য, বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় এক সময় বহুল সেবনকৃত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেওয়ার ঘোষণার কারণে বাংলাদেশও এই ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ করল।

এ উপলক্ষে রোববার জরুরি সভার ডাক দিয়েছিল দেশের ওষুধের বাজারের সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠান ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতর। বৈঠক শেষে দেশের বাজারে রেনিটিডিন ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতর। গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় একসময় মুড়ি-মুড়কির মতো চলতো রেনিটিডিন ট্যাবলেট। বিভিন্ন খ্যাতনামাসহ ছোট-বড় সব ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ ট্যাবলেট উৎপাদন করত। রেনিটিড ও রেনিডিন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এখনও দেশের বাজারে ওষুধটি চলছে। প্রতি পিস ট্যাবলেটের খুচরা মূল্য তিন টাকা।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় এক সময় বহুল সেবনকৃত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের বাজার থেকেও রেনিটিডিন গ্রুপের ‘জ্যানটেক’ নামের এই ট্যাবলেট প্রত্যাহারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে কোম্পানিটি।

ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজার গবেষণা সংস্থা এআইওসিডি আওয়াকস ফার্মা ট্রাক বলছে, শুধু ভারতেই প্রায় ৬৮৮ কোটি রুপির ব্যবসা করছে রেনিটিডিন। রেনিটিডিন ছাড়াও একই ব্র্যান্ডের রেনট্যাক, রেনট্যাক-ওডি, আর-লক, রেনিটিনও গ্যাসের ট্যাবলেট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বের বাজার থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন রেনিটিডিন তুলে নিলেও অন্যান্য সংস্থা গ্যাসের চিকিৎসার এই ওষুধ তুলে নিচ্ছে কি-না সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

Advertisement

Trending

Exit mobile version