পায়ে জটিল সমস্যা। শিগগিরই দরকার অস্ত্রোপচার। কিন্তু এ অস্ত্রোপচার করাতে একদিন-দুইদিন নয়, হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করাতেই তিন বছর পর ভর্তির তারিখ দেওয়া হয়। এমনই কান্ড ঘটেছে রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে)।
এক দুর্ঘটনায় মো. মাসুম বিল্লাহ নামের এক তরুণের পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। চিকিৎসা নিতে ২৩ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালে যান তিনি। চিকিৎসক প্রথমে তাকে প্রাথমিক পরীক্ষা করে জানান, অস্ত্রোপচারের লাগবে। এক মাস পর যোগাযোগ করতে বলেন। ঠিক এক মাস পর মাসুম কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তাকে তিন বছর পর ২০২২ সালের ২১ মার্চ অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তির তারিখ দেওয়া হয়।
ভর্তির তারিখ জেনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান মাসুম বিল্লাহ। তার দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সময় এগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। হাসপাতাল থেকে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, এর আগে তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনে তিনি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন।
মাসুম এখন মিটফোর্ড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। এ হাসপাতালে রোববার তার অস্ত্রোপচার হয়েছে।
মাসুম জানান, তিনি বরিশালের নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা। বাবা হুমায়ুন কবির ও মা আসমা বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জনতা ব্যাংক, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে ক্যাজুয়াল লেবার হিসেবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। বরিশাল শহরে মাস তিনেক আগে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় যান আলফা ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। তার বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক কবিরুজ্জামানের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। তার পরিচিত ডা. হারুনুর রশিদ খানের সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
মাসুম বলেন, ‘২৩ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগে যাই। টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তাররা আমার টেস্টের কাগজপত্র দেখেন এবং এক মাস থেরাপি নিতে বলেন। এক মাস থেরাপি নেওয়ার পর দেখা করি। তখন ২০-২২ জনের ফাইলের সঙ্গে আমার ফাইলটি নেন চিকিৎসকরা। অপেক্ষা করার পর তারা টিকেটে ২০২২ সালের ২১ মার্চ ভর্তির ডেট লিখে দেন।’ মাসুম বলেন, আমি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারি না। পায়ে ব্যথা অনেক। আমার দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে দ্রæত অপারেশন করার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তারা জানান, সিরিয়াল অনেক লম্বা। আগে করাতে চাইলে বেসরকারি হাসপাতালে যান।’
এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, রোগীর অবস্থা বুঝে হয়তো এই তারিখ দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের হাসপাতালে লিগামেন্টের রোগী ভর্তির জন্য মাত্র দুটি বেড আছে। সপ্তাহে দুজনের বেশি ভর্তি করা যায় না। রোগী আসেন দিনে ৬০ জন।
একজন রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের কনসালট্যান্ট হারুনুর রশিদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে লিগামেন্টের রোগী ভর্তির জন্য মাত্র দুটি বেড আছে। সপ্তাহে দুজনের বেশি ভর্তি করা যায় না। রোগী আসেন দিনে ৬০ জন। তাই অস্ত্রোপচারের দীর্ঘ অপেক্ষার সারিতে থাকতে হয় রোগীকে।
একজন রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে হারুনুর রশিদ খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এখানে এটাই সিস্টেম। সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে “না” বলা যাবে না। কিন্তু এখানে বেডস্বল্পতা রয়েছে। হাসপাতালে ৫০০ বেডের নতুন ভবন হচ্ছে, তখন সমস্যার কিছু সমাধান হতে পারে।’