প্রধান খবর

নিপাহ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে যেভাবে খাবেন খেজুরের রস

Published

on

প্রকৃতির পালাবদলে শীত মৌসুম এলেই আমাদের চারপাশ সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। আর এই সাজের অন্যতম অনুসঙ্গ খেজুরের রস। আবহমান কাল ধরে গ্রামবাংলার মানুষের রসনা বিলাসের পাশাপাশি পুষ্টির জোগান দিয়ে যাচ্ছে খেজুরের সুমিষ্ট রস। কিন্তু নিপাহ ভাইরাসের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সুস্বাদু পানীয়টি।

এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, গেল ২২ বছর ভাইরাসটি আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৬ জন এবং মারা গিয়েছেন ২৩১ জন, যার অধিকাংশেরই আক্রান্তের উৎস এই খেজুরের রস।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শতকরা ৭১% মানুষ মারা যায় বলে সতর্ক করেছেন আইইডিসিআর পরিচালক।

নিপাহ ভাইরাস আতঙ্ক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিপাহ ভাইরাস এক ধরনের ‘জুনোটিক ভাইরাস’—যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। পরে সেটি মানুষে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এতে রোগী জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। এক পর্যায়ে খিচুঁনিও দেখা দিতে পারে।

Advertisement

আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কেন

বাংলাদেশে খেজুরের রসখেকো বাদুড় হচ্ছে নিপা ভাইরাসের প্রধান উৎস। সাধারণত গাছিরা কলসি ঝোলানোর পর সারারাত রস নিঃসরিত হয়। সেখানে কীট পতঙ্গসহ নানা ধরনের পাখি, বিশেষ করে রাতে নিশাচর প্রাণী বাদুড় রস পান করতে আসে। সেই রস খাওয়ার সময় বাদুড়ের মল-মুত্র ও মুখ থেকে নিঃসৃত লালা খেজুরের কাঁচা রসের সাথে মিশে রসকে দূষিত করে। এই দূষিত রস কাঁচা অবস্থায় খেলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি সংক্রমিত হতে পারে।

যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি ও ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

যেভাবে ঝুঁকিমুক্ত উপায়ে রস খেতে পারেন

Advertisement

নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভের কোনো টিকা নেই, তাই এই ভাইরাস এড়ানোর একমাত্র উপায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো

প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা

এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায় হলো, গাছগুলোর রস সংগ্রহের জায়গায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে বাদুড় এর সংস্পর্শে আসতে না পারে। এর অংশ হিসেবে বাঁশ ও কাঠের খাঁচা বা পলিথিন দিয়ে রস নিঃসরণের উৎসস্থল ও কলসির মুখ ঢেকে দিতে হবে।

গাছিদের থেকে রস নেওয়ার সময় সতর্কতা

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও সুস্থ ব্যক্তিদের সংক্রমিত করতে পারেন। গাছিরা কতটা ঝুঁকিমুক্ত উপায়ে রস সংগ্রহ করেছেন, তা জানার সুযোগ কম। তাই শুধু দূষিত খেজুরের রসে নয়, বরং নিপা ভাইরাসে সংক্রমিত গাছির মাধ্যমেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই তাদের থেকে রস নেওয়া হলে ভালো করে গোসল করে ফেলতে হবে বা এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সব রকম শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে খেজুর রস কিনে নেওয়া যেতে পারে।

Advertisement

রস বাড়িতে আনার পর করণীয়

অধিক তাপমাত্রায় নিপাহ ভাইরাস টিকতে পারে না। তাই সদ্য সংগ্রহ করা খেজুরের রস বাড়িতে এনেই ফুটিয়ে নিতে হবে। সাধারণত ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে কিছু উত্তপ্ত হলেই ভাইরাস মরে যায়। সতর্কতার অংশ হিসেবে খেজুর রসের হাঁড়িটিও গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাওয়া

দূষিত খেজুর রস খাওয়ার পর কারও আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত কোনো কিছুই ধরা যাবে না। আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র নিয়মিত গরম পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তিদের পরিচর্যার সময় হাতে গ্লাফ্স ও মুখে মাস্ক পরতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রস সংগ্রহের তিন ঘণ্টার মধ্যে বা কড়া রোদ ওঠার আগেই রস খেয়ে ফেলতে হবে। দেরিতে রস খেলে বমি, পাতলা পায়খানা ও পেটে গ্যাসসহ পরিপাকে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

Advertisement

প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। এতে আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও গ্লুকোজসহ প্রচুর ভিটামিনের পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা অনেকটা প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকের মতো কাজ করে। তাই শরীরে দুর্বলভাব কাটিয়ে কর্মচঞ্চলতা ফেরাতে দারুণভাবে কাজ করে খেজুরের রস।

একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। তবে এক গ্লাস খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস কিংবা কিডনি রোগীদেরকে খেজুরের রস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

Trending

Exit mobile version