অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানকে। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে সহযোগিতা করবেন। ডা. মো. সায়েদুর রহমান গত ২৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের বিভিন্ন ওষুধসংক্রান্ত নীতি ও নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের অল্প কয়েকজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্যতম, যারা সক্রিয়ভাবে জাতীয় ওষুধনীতি ১৯৮২ সমর্থন করেছিলেন। তিনি সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফর্মুলারি এবং বাংলাদেশ কোড অব ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং প্র্যাকটিসের অন্যতম লেখক। ৩২ বছর ধরে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল শিক্ষকতায় সম্পৃক্ত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাব্যবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
স্বাস্থ্য খাত বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই?
ন্যাশনাল ড্রাগ পলিসি, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স, ফার্মাকোভিজিল্যান্স, ফার্মাকোইকোনোমিক্স, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস, মেডিসিন ইউটিলাইজেশন স্টাডিজ, মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড এনিম্যাল স্টাডিজসহ অনেক বিষয়ে আমার গবেষণা রয়েছে। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু সংস্কার করতে চাই। যাতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সহজে নিশ্চিত করা যায়। সব পর্যায়ের মানুষ যেন সুচিকিৎসা পায়, সে জন্য কিছু সংস্কার করব। এ ছাড়া আরো অনেক পরিকল্পনা আছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার মতো একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
দেশের একটি সংকট মুহূর্তে আমি দায়িত্ব পেয়েছি। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে কঠিন অবস্থা বিরাজ করছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখেছি, চিকিৎসা খাতে আমাদের কিছু ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কঠিন এই সময়ে দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে দেশের স্বাস্থ্য খাতে ভালো কিছু করার জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য সময়। আমাদের ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, সেটি কাজে লাগাতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
প্রত্যেক আহত ব্যক্তির জন্য পরিচয়পত্র থাকবে, যেটি তার সুবিধা নিশ্চিত করবে। আহত ব্যক্তিরা দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সারা জীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন। তাদের জন্য সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট শয্যা থাকবে। ঢাকার হাসপাতালগুলোকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে, যাতে দেখা যাবে কোন হাসপাতালে কয়টি শয্যা খালি আছে। যেসব বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানেও বিনা মূল্যে চিকিৎসা অথবা চিকিৎসা ব্যয়ের আংশিক সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য আহত ব্যক্তিরা যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছেন, যাচাই করে সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। এই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সম্মানের সঙ্গে পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্যরে সঙ্গে মিলিয়ে প্রশিক্ষিত করে আহত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। কোনো কোনোটি হয়তো তিন দিন, কোনো কোনোটি পাঁচ দিন, কোনো কোনোটি ১৫ দিনের মধ্যে করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কটি দৃশ্যমান হবে।
যারা পঙ্গু হয়ে গেছেন, তাদের প্রয়োজনীয় ফিজিওথেরাপি অথবা কোনো যন্ত্র লাগানোর প্রয়োজন হলে তা লাগানো হবে। প্রয়োজনে রোবোটিক চিকিৎসা এবং অত্যাধুনিক যন্ত্র প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ট্রমার মধ্যে পড়া আহত ব্যক্তিদের মানসিক সহায়তার আওতায় আনা হবে। আহত ব্যক্তিদের জন্য একটি সহায়তা কেন্দ্র (সাপোর্ট সেন্টার) থাকবে এবং সেখান থেকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
চিকিৎসা না পাওয়া ও গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলুন?
চিকিৎসার বিষয়ে কোনো গাফিলতি একেবারেই সহ্য করা হবে না। কারো গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যেগুলো স্বল্পমেয়াদি, সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে হবে; যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি, সেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলবে।
আহতের চিকিৎসায় কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে?
আহতের দাবিগুলো লিখিত আকারে উপস্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির সেটি প্রকাশ করা হবে। চিকিৎসা না পাওয়ার কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলনে অচল হয়ে যাওয়া মো. মুরাদ ইসলাম (৪১) নামের একজন আজ বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন। মুরাদ গুলশানের ক্যাফে রিও-এর ম্যানেজার ছিলেন। এর আগে কাজল নামে একজনকে থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।