টিপস & ট্রিকস

শিশুর মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে তো?

Published

on

শিশুর বিকাশ একটা চলমান প্রক্রিয়া। বিকাশের স্তর অনুযায়ী শিশু একেকটা বয়সে একেকটা কাজ করবে। তা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত নজর রাখা উচিত। তবে সব শিশুর বিকাশ একই গতিতে হবে এমন নয়, একটু এদিক–সেদিক হতে পারে।

প্রায় সব মা–বাবাই সাধারণত বেশি নজর দেন শিশু কবে হামাগুড়ি দিল, কখন হাঁটতে পারল, কখন কথা বলা শিখতে পারল—এসবের ওপর। এগুলো নিশ্চয় শিশুর বিকাশ, তবে তা শারীরিক বিকাশ।

মায়ের গর্ভ থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত প্রারম্ভিক বিকাশ শেষে শৈশব, কৈশোর, বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে সে হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ মানুষ। এর প্রতিটি পর্যায়ে শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনও ঘটে। এভাবে ক্রমান্বয়ে দক্ষ ওঠাইকেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ বলা হয়।

শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন গর্ভকালীন মায়ের যত্ন, মায়ের পুষ্টি ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা, প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করা, এরপরে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর সুষম খাবার দেওয়া। যেসব শিশু ঘন ঘন অসুস্থ হয়, পুষ্টি কম পায়, তাদের সমবয়সের অন্য বাচ্চাদের তুলনায় বিকাশ ধীরে হতে পারে।

অন্যদিকে মানসিক বিকাশ সুস্থ-স্বাভাবিক করার জন্য বাবা-মাসহ চারপাশের মানুষের আচরণ আর শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে হবে। অস্বাভাবিক পরিবেশ সুস্থ মানসিক শিশু উপহার দিতে পারে না। আর ইতিবাচক মানসিক বিকাশ অর্থবহ করে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। নিয়মিত ব্যায়াম, শারীরিক খেলাধুলা শারীরিক ও মানসিক উভয়কেই ত্বরান্বিত করে।

Advertisement

শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে কি না, তা কীভাবে বুঝবেন—

১ম মাসে
শিশুর মাথা একদিকে ফিরিয়ে চিত হয়ে শোয়া। হঠাৎ আওয়াজে চমকে যায় বা শরীর স্থির হয়ে যায়। হাতের মুঠো বন্ধ করে থাকে। বাচ্চার হাতের তালুতে কিছু ছোঁয়ালে সেটা ধরার চেষ্টা করে।

২-৩ মাসে
নিজের মাথা স্থির করতে শিখে। চোখের দৃষ্টি কোনো জিনিসের ওপর স্থির করতে পারে। চিত হয়ে শুয়ে বাচ্চা দুই হাত-পা সমানভাবে নাড়ে। তার নড়াচড়া ঝাঁকুনি দিয়ে বা অসংবদ্ধ হয় না। কান্নার আওয়াজ ছাড়াও বাচ্চা মুখ দিয়ে নানা রকম আওয়াজ করে। শিশুটি তার মাকে চিনতে পারে এবং তার গলার আওয়াজে সাড়া দেয়।

৬ মাসে
আশপাশে শব্দ শুনলে মাথা ঘোরায়। চিত থেকে উপুড় বা উপুড় থেকে চিত হতে পারে। ঠেকা দিয়ে অল্প সময়ের জন্য বসতে পারে। শিশুকে উঁচু করে ধরলে পায়ে কিছু ভার নিতে পারে। উপুড় হয়ে শুয়ে হাত-পা ছড়িয়ে নিজের শরীরের ভার নিতে পারে।

৯ মাসে
কোনো অবলম্বন বা ঠেকা ছাড়া কিছু না ধরে বসতে পারে। হাঁটু ও হাতের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিতে পারে।

Advertisement

১২ মাস
বাচ্চা ঠেলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ‘মামা’ বলতে শুরু করে। আসবাব ধরে বাচ্চা হাঁটতে পারে।

১৮ মাস
সাহায্য ছাড়াই একটা গ্লাস ধরতে পারে এবং তার থেকে পানি পান করতে পারে। সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারে। দু-একটা শব্দ বলতে পারে। নিজে নিজে খেতে পারে।

২ বছরে
পায়জামা ধরনের কিছু জামাকাপড় খুলে ফেলতে পারে। না পড়েই দৌড়াতে পারে। ছবির বইয়ের ছবিতে বাচ্চা আনন্দিত হয়। বাচ্চা কী চায় বলতে পারে। অন্যদের বলা কথা বাচ্চা নকল করতে শুরু করে। তার শরীরের কিছু কিছু অংশ চেনাতে পারে।

৩ বছরে
হাত তুলে কাঁধের ওপর থেকে বল ছুড়তে, সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, যেমন ‘তুমি ছেলে, না মেয়ে?’ অন্তত একটা রঙের নাম বলতে পারে।

৪ বছরে
সাইকেলে প্যাডেল করতে পারে, বইয়ে, পত্রিকায় বা ম্যাগাজিনের ছবির নাম বলতে পারে।

Advertisement

৫ বছরে
তার জামাকাপড়ের বোতাম লাগাতে, অন্তত তিনটি রঙের নাম বলতে পারে। পা বদল করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারে।

বিকাশের স্তরগুলোর মধ্যে কয়েকটি যদি শিশুর মধ্যে প্রকাশ না পায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণভাবে এই দক্ষতাগুলোর মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রকাশ না পেলে বা দেখা না গেলে শিশুর বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে বলা হয়।

Trending

Exit mobile version