গোল্ডেন ব্লাড: পৃথিবীতে যে রক্ত রয়েছে মাত্র ৪৩ জনের দেহে

মানবদেহের রহস্য উন্মোচনে গবেষণা ক্ষেত্রেও গোল্ডেন ব্লাড খুব গুরুত্বপূর্ণ।

একটু বিরল রক্তের গ্রুপ হলে প্রয়োজনের সময় হিমশিম খেতে হয় রোগীর স্বজনদের। তবে আজকাল বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দুর্লভ গ্রুপ হলেও প্রয়োজনে রক্তদাতা পাওয়া যায়। কিন্তু বিরলতম রক্তের গ্রুপ হচ্ছে ‘গোল্ডেন ব্লাড’। সারা পৃথিবীতে এমন ধরনের রক্ত শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন মাত্র ৪৩ জন মানুষ! গবেষণা এবং রক্তদানের তথ্য থেকে এমনটাই জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এই রক্তবাহী মানুষকে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

এবার আসা যাক ‘গোল্ডেন ব্লাড’ কী সে বিষয়ে। সব মানুষের রক্ত দেখতে লাল বর্ণের হলেও গঠনগত পার্থক্যটা আসলে রক্তে থাকা ৩৪২টি এন্টিজেনে। এদের মধ্যে ১৬০টি এন্টিজেন সবার রক্তেই বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে কারও রক্তে যে কোনও একটি এন্টিজেন যা শতকরা ৯৯ জন মানুষের রক্তেই বিদ্যমান, তার অনুপস্থিতি থাকলে সেই রক্তের গ্রুপকেই ধরা হয় ‘দুর্লভ’ হিসেবে। আর শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষের রক্তে থাকে এমন এন্টিজেন কারও রক্তে অনুপস্থিত থাকলে সেই রক্তকে ধরা হয় ‘খুব দুর্লভ’ হিসেবে।

উল্লেখিত ৩৪২টি এন্টিজেন আবার থাকে ৩৫টি ব্লাড গ্রুপ সিস্টেমের মধ্যে। এই সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো আরএইচ (Rh) সিস্টেম, এতে থাকে ৬১টি এন্টিজেন। এই ৬১টির মধ্যে যে কোনও একটির অনুপস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু এর সবগুলোই যদি কারও রক্তে অনুপস্থিত থাকে তবে?

গত শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও চিকিৎসকরা এমন কারও অস্তিত্ব পৃথিবীতে থাকতে পারে বলে মনে করতেন না। এমনকি মাতৃগর্ভেই তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা ছিল চিকিৎসকদের। কিন্তু ১৯৬১ সালে প্রথমবারের মতো এমন রক্তধারী একজন অস্ট্রেলিয়ান নারীর সন্ধান পান তারা। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মাত্র ৪৩ জন এমন মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এমন রক্তকে ‘আর-এইচ নাল ব্লাড’-ও বলা হয়। তবে এটি ‘গোল্ডেন ব্লাড’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। কারণ আরএইচ এন্টিজেন না থাকায় আরএইচ নেগেটিভ গ্রুপের যে কারও দেহেই এই রক্তের সঞ্চালন সম্ভব। এর জীবন বাঁচানোর ক্ষমতা অস্বাভাবিক রকমের বেশি হওয়ায় ব্লাড ব্যাংকে স্যাম্পল জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও রক্তদাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।

আবার, মানবদেহের রহস্য উন্মোচনে গবেষণা ক্ষেত্রেও গোল্ডেন ব্লাড খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এমন রক্ত নিয়ে জন্ম নেয়া কোনও ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন হলে দেখা দেয় আসল সমস্যা। তাই তাদের জীবনধারণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এমন রক্তধারী সেই ৪৩ জনের মাত্র একজনকেই চেনেন সবাই। ২০১৪ সালে থমাস নামের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আটলান্টিকে। গোল্ডেন ব্লাডের ধারক হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে এমন কোথাও ছোটবেলায় তাকে যেতে দিতেন না বাবা-মা। অত্যাধুনিক হাসপাতাল সুবিধা নেই এমন কোনও দেশেও ভ্রমণ করেন না তিনি। সেইসঙ্গে নিজের কাছে একটি কার্ড রাখেন যেখানে তার এই ‘অতি-দুর্লভ’ রক্তের গ্রুপের কথা লেখা থাকে।

গোল্ডেন ব্লাডের সুবিধা হলো- আপনি এই রক্তের ধারক হলে শুধুমাত্র রক্তদানের মাধ্যমেই অজস্র মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে, যখন আপনার রক্তের প্রয়োজন হবে তখন সেটা হবে রীতিমতো মহাসংকট।

Exit mobile version